পদ্মা নদীর বুক চিরে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে জেগে ওঠা চরটির নাম রাখালগাছি-বেতকা। প্রায় ২ যুগ ধরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা এই চরে এখন ২০০টি পরিবারের বসবাস। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো- এই দীর্ঘ সময়েও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন কিছুই লাগেনি এই জনপদের গায়ে।
বারবার নদীভাঙনে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে এই এলাকা। অনেকে বসতভিটা হারিয়েছেন একাধিকবার। ঘুরে দাঁড়ালেও উন্নয়নের আশায় পথ চেয়ে আছেন চরবাসীরা।
চরের একমাত্র পাকা সড়কটিও এখন জরাজীর্ণ, বর্ষায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। নেই কোনো সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক, নেই ওষুধের দোকানও। একমাত্র ভরসা ট্রলার, সেটাও দিনে মাত্র কয়েকবার চলে। কোনো রোগী গুরুতর অসুস্থ হলে চাঁদা তুলে ট্রলার ভাড়া করে নিয়ে যেতে হয় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে, যেখানে পৌঁছাতে লাগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা।
চরবাসী রফিক বলেন, রোগী মারা যাবে না বাঁচবে সেটিও একমাত্র নির্ভর করে উপরওয়ালা আর ট্রলারের মধ্যেই। এটা কি কোনো স্বাধীন দেশের বাস্তবতা? শুধু স্বাস্থ্যসেবাই নয়, এই চরটি এখনো বঞ্চিত পোস্ট অফিস, ভূমি অফিস, পুলিশ ক্যাম্প, সরকারি ব্যাংক এমনকি ন্যূনতম প্রশাসনিক উপস্থিতি থেকেও।
একটি মাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও সেখানে শিক্ষক সংকট রয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাদানের জন্য ২০১৭ সালে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠে ‘সোনালী সকাল প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’Ñ যেখানে চরাঞ্চলের প্রতিবন্ধী শিশুরা সীমিত সুযোগে শিক্ষার আলো পেলেও। তবে সেটিও নিয়মিত আর্থিক সংকটে পড়ে পরিচালনা করে প্রায় দীর্ঘদিন রয়েছে বন্ধ।
চরবাসী আমজাদ মাঝি (৬০) বলেন, আমরা শুধু ভোট দেই, সেবা কিছুই পাই না। ‘সরকার চর উন্নয়নের কথা বলে, বাজেটও হয়। কিন্তু আমাদের চর সব সময় উপেক্ষিত। বড় কোনো অফিসার তো দূরের কথা, ছোট কর্মকর্তাও এখানে নিয়মিত আসেন না।’
চরের বাসিন্দারা ইউনিয়ন পরিষদের সেবা নিতে গেলেও পড়তে হয় দুর্ভোগে। ট্রলার, রিকশা ও অটো মিলিয়ে প্রায় ১০০ টাকা খরচ তাও পৌঁছাতে সময় লেগে যায় প্রায় একদিন। ফলে ছোটখাটো সেবা নিতে গিয়েও বাধা হয়ে দাঁড়ায় দূরত্ব আর খরচ। অন্যদিকে, প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে চর এলাকায় বাড়ছে মাদক পাচার, সন্ত্রাস, বাল্যবিয়ে ও অপরাধমূলক কর্মকা-। কোনো পুলিশ ক্যাম্প না থাকায় অপরাধীরা বারবার পার পেয়ে যায়।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চরের বাসিন্দারা লিখিতভাবে তাদের সমস্যার কথা আমাদের জানিয়েছে। আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছি।’ তবে চরবাসীর প্রশ্ন দুই দশক ধরে যারা পদ্মার সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছেন, তাদের জন্য উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি কবে বাস্তবে রূপ নেবে?
পদ্মার চরে শুধু মানুষ নয়, বসবাস করে প্রতিদিনের সংগ্রাম। রাখালগাছির মানুষ রাষ্ট্রের দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকে আজও বেঁচে থাকার যুদ্ধ করে চলেছে কোনোদিন উন্নয়নের আলো তাদের দরজায় কড়া নাড়বে কি?
আপনার মতামত লিখুন :