কিছু দিন ধরেই ইলিশের দেখা না মেলায় জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা হতাশ ছিলেন। তবে, গত কয়েক দিন ধরে সাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে এবং মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলোয় সরবরাহ বেড়েছে। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলোয় এখন ইলিশভর্তি ট্রলার ভিড়ছে। বিশেষ করে, বঙ্গোপসাগরে প্রচুর ধরা পড়ছে এবং জেলেরা ট্রলার ভরে ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছেন।
এদিকে সাগরে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ায় পাইকারি বাজারে কিছুটা দাম কমেছে। তবে খুচরা বাজারে এখনো ক্রেতাদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। ইলিশ ধরা শুরু হওয়ায় দুই দিন ধরে পটুয়াখালীর মৎস্যবন্দর আলীপুর, মহিপুর এবং কুয়াকাটার অন্তত দেড় শতাধিক আড়তে মালিক, কর্মচারী ও জেলেদের ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকার ও মহাজনরা এসে ট্রাকভর্তি করে ইলিশ নিয়ে যাচ্ছেন।
মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন এ সময়টাই ভরা মৌসুম। কিন্তু মৌসুমের অর্ধেক পার হলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সাগরে কাঙ্খিত ইলিশ পাননি জেলেরা। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সাগর শান্ত, ফলে ছোট-বড় সব ধরনের ট্রলারই কমবেশি ইলিশ পাচ্ছে। আড়তে এখন এমন চিত্র। কেউ ট্রলার থেকে মাছ নামাচ্ছেন, কেউ ওজন দিচ্ছেন, কেউ হিসাব খাতায় লিখছেন কারো বসে থাকার সময় নাই। পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরায় তার প্রভাব এখনো পড়েনি।
হাসান নামের এক জেলে বলেন, ‘সাগরে প্রচুর ইলিশ আছে। কিন্তু স্রোত বেড়ে যাওয়ায় জাল ফেলা যাচ্ছে না। কয়েক দিন সাগর একটু শান্ত থাকায় মাছ পাওয়া যাচ্ছে। মাছ পেয়ে আমরা খুশি।’
এফবি তামান্না নামে ট্রলারের মাঝি ইউনুছ মিয়া বলেন, ‘আমরা লম্বা জাল নিয়ে মাছ ধরি। আমার জাল সাড়ে তিন ইঞ্চি থেকে চার ইঞ্চির। আমি ৬৫০ পিস বড় সাইজের ইলিশ পেয়েছি। সেগুলো ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। ট্রলিং জাল, ছোট ফাঁসের জাল বন্ধ করলে আরও বেশি মাছ পাওয়া যেত।’
মৎস্য ব্যবসায়ী আবদুল জলিল বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। প্রতিদিন গড়ে শুধু আলীপুর বন্দরে ২০-২৫ টন ওঠে। মাছের সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কিছুটা কমছে।’
গতকাল কুয়াকাটার পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১ কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৫৮ হাজার টাকা মণে। ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ‘গোটলা’ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২১ হাজার ৫০০ টাকা মণে, যা ১০ দিন আগেও এই সাইজের ইলিশ মণপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি ছিল। তবে কলাপাড়া পৌর মাছ বাজারে খুচরায় দাম প্রায় অপরিবর্তিত। ১ কেজি ইলিশ এখনো ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ছোট সাইজের ইলিশেও তেমন পরিবর্তন নেই।
অনেকের অভিযোগ, এ সুযোগে খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামে ইলিশ বিক্রি করছেন, যা সাধারণ ক্রেতাদের ক্ষোভের কারণ হয়েছে। স্থানীয় ক্রেতা বরুণ কর্মকার বলেন, ‘পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরায় কোনো পরিবর্তন নেই। সাধারণ মানুষের পক্ষে ইলিশ কেনা এখনো কষ্টকর।’
শিক্ষক মো. তরিকুজ্জামান বলেন, ‘গোনা পয়সায় চলা পরিবারগুলোর জন্য ইলিশ এখন বিলাসিতা। জেলেদের ধরা মাছও বাইরের পাইকাররা বেশি দামে কিনে নিয়ে যায়।’
মহিপুর মৎস্য বন্দরের হাওলাদার ফিশের মালিক আব্দুল জলিল হাওলাদার জানান, ‘গত সপ্তাহের তুলনায় পাইকারি বাজারে মণপ্রতি ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে দাম। এভাবে মাছ ধরা পড়লে লোকসান কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, আর সাধারণ মানুষও ইলিশ খেতে পারবে।’
কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘সাগরে কিছু দিন ইলিশের খরা চলছিল। বর্তমানে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। বৃষ্টি থাকলে আরও বেশি ইলিশ ধরা পড়বে। বন্দরে ইলিশসংশ্লিষ্ট সবাই লাভবান হবেন।’