দক্ষিণ কোরিয়ার আকাশ শনাক্তকরণ অঞ্চল কাডিস-এ সাতটি রাশিয়ান ও দুটি চীনা যুদ্ধবিমান প্রবেশ করায় সিউল জরুরি ভিত্তিতে নিজেদের যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। এরই মধ্যে চীন-জাপান কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলমান থাকায় এই ঘটনা নতুন করে আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
দ. কোরিয়ার দাবি
দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জানিয়েছে, ৯ ডিসেম্বর বিমানগুলো উপদ্বীপের পূর্ব ও দক্ষিণ উপকূলঘেঁষা অঞ্চলে প্রবেশ করলেও তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সার্বভৌম আকাশসীমায় ঢোকেনি। তবে সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়ার বিমানবাহিনী যুদ্ধবিমান পাঠায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা ও রাশিয়ান বিমানগুলো কাডিস-এ ঢোকার আগেই নজরে আসে এবং পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে ‘স্ট্যান্ডার্ড স্ক্র্যাম্বল অপারেশন’ পরিচালিত হয়।
রাশিয়ার ব্যাখ্যা
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাপান সাগর, পূর্ব চীন সাগর ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর তাদের কৌশলগত বোমারু ও যুদ্ধবিমান প্রায় আট ঘণ্টা টহল দিয়েছে।
মস্কোর দাবি, অভিযান সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক আইনের মধ্যে ছিল এবং কোনো দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করা হয়নি।
জাপানের আকাশেও চীন-রাশিয়ার তৎপরতা
একই সময় জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, রাশিয়ার দুইটি পারমাণবিক সক্ষম টু-৯৫ বোমারু পূর্ব চীন সাগরে গিয়ে চীনা এইচ-৬ বোমারুর সঙ্গে যুক্ত হয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরের ওপরে দীর্ঘ রুটে যৌথ ফ্লাইট পরিচালনা করে।
অভিযানের দ্বিতীয় ধাপে চারটি চীনা জে-১৬ ফাইটার ওই গ্রুপে যোগ দেয়।
জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, এটি ‘জাপানের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনের স্পষ্ট ইঙ্গিত’ এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
জাপান আরও জানিয়েছে, একই সময়ে জাপান সাগরে পৃথকভাবে রাশিয়ার এ-৫০ আকাশ সতর্কতা বিমান ও দুটি সু-৩০ যুদ্ধবিমান উড়তে দেখা গেছে।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া নিশ্চিত করে জানিয়েছে, তাদের আকাশ শনাক্তকরণ অঞ্চলে রাশিয়ার সাতটি ও চীনের দুটি বিমান ঢোকার ঘটনা বৃহত্তর আঞ্চলিক সামরিক কার্যক্রমের অংশ।
চীন-রাশিয়া সামরিক ঘনিষ্ঠতা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশই যৌথ সামরিক সহযোগিতা বাড়িয়েছে- রাশিয়ার ভূখণ্ডে যৌথ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা মহড়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সঙ্গে লাইভ-ফায়ার নৌ মহড়া পর্যন্ত।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল ঘোষণা করেছে, যেখানে পূর্বের তুলনায় রাশিয়া ও চীনের নাম উল্লেখ কম থাকলেও এশিয়ার মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে- বিশেষ করে তাইওয়ান রক্ষায় সমর্থন বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
তাইওয়ানকে ঘিরে উত্তেজনা, চীন–জাপান বিরোধ এবং চীন–রাশিয়ার সমন্বিত ফ্লাইট- সব মিলিয়ে উত্তর-পূর্ব এশিয়ার আকাশ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

