গাজায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা বাড়ছে, ঠিক সেই সময় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিলেন হামাসের রাজনৈতিক নেতা খালেদ মাশাল। তিনি জানিয়েছেন, হামাস ভবিষ্যতে গাজা থেকে ইসরায়েলের ওপর হামলা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। তবে একই সঙ্গে স্পষ্ট করে বলেছেন—হামাসকে নিরস্ত্র করা মানে সংগঠনের ‘আত্মা কেড়ে নেওয়া।’
আল জাজিরার (আরবি) সাক্ষাৎকারে খালেদ মাশাল বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষের পথে থাকলেও ইসরায়েলের লাগাতার লঙ্ঘনের কারণে পুরো প্রক্রিয়াটি এখন ঝুঁকির মুখে।
হামাসের দাবি, গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭৩৮ বার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। এসব হামলায় প্রাণ গেছে অন্তত ৩৭৭ জনের।
গতকাল মঙ্গলবার হামাস জানায়, যতদিন ইসরায়েল চুক্তির শর্ত মানবে না, ততদিন যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপে অগ্রগতি সম্ভব নয়। বিশেষ করে— রাফাহ সীমান্ত এখনও পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি, পর্যাপ্ত ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, প্রায় প্রতিদিনই হামলা চালানো হচ্ছে। এই কারণগুলোকে যুদ্ধবিরতির বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করে সংগঠনটি।
গাজা শাসনে বিদেশি কর্তৃত্ব মানবে না হামাস
খালেদ মাশাল আরও বলেন, গাজার শাসনব্যবস্থায় কোনো অ-প্যালেস্টিনীয় কর্তৃপক্ষকে হামাস মেনে নেবে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর মাধ্যমে গাজা শাসনের যে আলোচনা চলছে, সেটিকেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
এ প্রসঙ্গে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার-এর নাম উঠে এলে হামাস শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে। হামাস নেতা হুসাম বদরান আগেই বলেছিলেন, টনি ব্লেয়ার ফিলিস্তিন, আরব বা মুসলমানদের জন্য কখনোই কল্যাণ বয়ে আনেননি।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, আরব ও মুসলিম বিশ্বের বিরোধিতার কারণে ব্লেয়ারকে ওই বোর্ডে রাখার পরিকল্পনা ইতিমধ্যে বাতিল হয়েছে।
নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব
ইসরায়েল স্পষ্টভাবে দাবি করেছে, যুদ্ধের দ্বিতীয় ধাপে হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্র করা হবে প্রধান লক্ষ্য। তবে মাশাল বলেন, হামাস যদি অস্ত্র ছাড়ে, তাহলে সেটি হবে সংগঠনের আত্মা হারানোর মতো।
তিনি জানান, ভবিষ্যতে যদি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হয়, তখন হামাস অস্ত্রের বিষয়ে ভিন্নভাবে ভাবতে পারে—কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় তা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয় ধাপে হামাসের শর্ত
হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হতে হলে আগে— ১. গাজায় মানবিক সহায়তা বড় পরিসরে ঢুকতে হবে, ২. ইসরায়েলকে পুরোপুরি গাজা থেকে সরে যেতে হবে, ৩. তথাকথিত ‘ইয়েলো লাইন’-এর বাইরে গিয়ে পূর্ণ প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।
মাশাল আরও জানান, গাজাকে আবার দাঁড় করাতে পারে—এমন সহযোগীদেরই দরকার, দমনকারী নয়।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও মধ্যস্থতাকারীদের বার্তা
কাতার, তুরস্ক ও মিসরের কূটনৈতিক মহল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি এখন একটি ‘সংকটজনক মুহূর্তে’ রয়েছে। দোহা ফোরামে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি সতর্ক করে বলেন—সময় নষ্ট হলে পুরো চুক্তি ভেঙে পড়তে পারে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, হামাস নিরস্ত্রীকরণ এখনই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সবকিছু ধাপে ধাপে এবং বাস্তবতা বুঝে এগোতে হবে।
অন্যদিকে, মিসর বলছে, যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য দ্রুত একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েন করা প্রয়োজন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ প্রায় শেষ এবং তিনি দ্বিতীয় ধাপ এগিয়ে নিতে এই মাসের শেষ দিকে ওয়াশিংটনে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এদিকে, এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা নিয়ে জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে এবং কিছু অগ্রগতিও হয়েছে।
সূত্র : আল জাজিরা




