ঢাকা শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫

দরপত্র ছাড়াই কেটে ফেলা হয়েছে সহস্রাধিক গাছ

জনাব আলী, রাজশাহী
প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০৭:৪১ এএম

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) হাজারো গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। কোনো টেন্ডার ছাড়াই এসব গাছ কেটে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এদিকে গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের কাছ থেকেও কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। গাছ লুটচক্রে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী, রেজিস্ট্রার, সিন্ডিকেট সদস্যসহ অনেকেই জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, নগরীর রাজপাড়া থানার সিলিন্দায় ২০৫ বিঘা আয়তনের বিশাল জায়গা অধিগ্রহণ করে রামেবির ক্যাম্পাসটি গড়ে তোলা হচ্ছে। ওই ক্যাম্পাসে আগেই থাকা অসংখ্য তাজা গাছ রয়েছে। সম্প্রতি গাছগুলো লুট হয়ে গেছে। গাছ লুটের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ একজন সিন্ডিকেট সদস্য জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার আমগাছের প্রায় ২০ লাখ টাকার আম গোপনে বিক্রি করে এ চক্র। কিন্তু সেই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। তবে পেছনের তারিখে লিজ দেখিয়ে ওই আমের কিছু টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা দেওয়ার চেষ্টা চলছে এখন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব মতে, নির্মাণাধীন ক্যাম্পাস চত্বরে প্রায় ৭ হাজার ৩০০ আমগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। এর মধ্যে আমগাছই বেশি। সেগুলো কেটে বিক্রির জন্য নাম্বারিং করা হলেও এখনো কোনো দরপত্র হয়নি কিংবা কার্যাদেশও দেওয়া হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন এ ক্যাম্পাসে বালুভরাটের কাজ করছে ঢাকার মিরপুরের প্রতিষ্ঠান ‘হোসাইন কন্সট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড’। তবে প্রতিষ্ঠানটির রাজশাহীর ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তাদের কাজ শুধু বালু ভরাট পর্যন্ত সীমিত, গাছ কাটার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

সম্প্রতি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, গোড়া থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে অসংখ্য গাছ। কাটা জায়গাগুলো মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে, কোথাও আবার খুঁড়ে ফেলা গাছের জায়গায় জমে আছে বৃষ্টির পানি। ক্যাম্পাসের পূর্ব পাশে সীমানাপ্রাচীর ও ড্রেন নির্মাণের কাজ চালাতে গিয়ে কয়েকশ গাছ আগেই কাটা হয়েছে। পূর্ব পাশের শ্রমিকদের থাকার ঘরের কাছে গোড়া থেকে কাটা দুটি আমগাছ ফেলে রাখা ছিল। শ্রমিকেরা জানালেন, কারা গাছ কেটেছে তা তাদের অজানা।

দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে আরও ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। সেখানে গাছ কেটে ফাঁকা করে রাখা জায়গায় হয়েছে শাকসবজির চাষ। প্রায় ১০ বিঘার একটি বাগানে সারি সারি কা- কেটে রাখা গাছ হাঁটুপানিতে ডুবে আছে। অন্তত অর্ধশতাধিক গাছ কেটে রাখা হয়েছে ওই বাগানে। সব গাছেই রঙ দিয়ে নম্বর লেখা আছে।

স্থানীয় আবদুল মমিন জানান, ১০ হাজার টাকা বেতনে তাকে ক্যাম্পাস দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে গাছ কারা কাটছে সে বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের দাবি, গাছ লুটচক্রে জড়িত আছেন হাফিজুল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, রামেবির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. হাসিবুল হোসেন এবং উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হোসেন। অভিযোগে আরও উঠে এসেছে, নামমাত্র মূল্যে বাগান ইজারা দিয়ে চলতি মৌসুমে প্রায় ২০ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা গাছ কাটার বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন বলেও সূত্রের দাবি।

অভিযোগের বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. হাসিবুল হোসেন বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়টা অফিসিয়ালি হয়নি। আমি প্রকল্প এলাকায় যাই না, আমার নাম কেন আসবে বুঝতে পারছি না।’ উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হোসেনও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।