জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেননি, বরং তাকে প্ররোচিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
সোমবার (৬ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে জেরার সময় এই দাবি করেন তিনি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৫৪তম ও সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন এই তদন্ত কর্মকর্তা।
জেরার সময় আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, ‘আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাননি। আমার মক্কেল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফাঁসাতে তদন্ত সংস্থার প্ররোচনায় তিনি জবানবন্দি দিতে বাধ্য হয়েছেন।’
জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আল-মামুন নিজের ইচ্ছাতেই জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে কেউ প্ররোচিত করেনি।’
শেখ হাসিনার আইনজীবী আরও দাবি করেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বহু মানুষ নিহত ও আহত হলেও জবানবন্দিতে গুটিকয়েক ভুক্তভোগী পরিবারের বক্তব্যই নেওয়া হয়েছে।’
এর জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রায় দেড় হাজার নিহত ও ২৫ হাজার আহতের মধ্যে আমরা ১০ জন শহীদ পরিবারের ও ২২ জন আহত পরিবারের সাক্ষ্য নিয়েছি। সময় ও নিরাপত্তা বিবেচনায় সবার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।’
একপর্যায়ে আমির হোসেন মামলার জব্দ তালিকার তথ্যগুলোকে ‘অসত্য’ বলে দাবি করেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর বলেন, ‘জব্দ তালিকার সব তথ্যই যাচাই-বাছাই করা ও সত্য।’
এ সময় ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে আইনজীবী অভিযোগ করেন, ‘মাহমুদুর রহমান শেখ হাসিনার প্রতি রাজনৈতিক বিদ্বেষ থেকে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘২০ ও ২১ এপ্রিল জব্দ করা ১৯টি ভিডিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি।’
জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা স্পষ্টভাবে বলেন, ‘এসব ভিডিও এআই জেনারেটেড নয়, সেগুলো বাস্তব ঘটনার ভিডিও।’
সোমবার বেলা পৌনে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে জেরা অনুষ্ঠিত হয়। কিছুক্ষণ বিরতির পর কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলেও তা শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
এ দিন প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, তানভীর হাসান জোহা, ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান ও মঈনুল করিম।
এদিকে, মামলার অন্যতম আসামি ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আজ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। তিনি ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে আগেই নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন।