ঢাকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫

মৃত্যুর ১১ দিন পর ফায়ার ফাইটার নুরুলের ঘরে এলো পুত্রসন্তান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০৭:০৬ পিএম
সহকর্মী ও স্বজনের কোলে ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদার নবজাতক সন্তান। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

গাজীপুরের টঙ্গীতে রাসায়নিক গুদামের আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদার ঘরে এলো ছেলে সন্তান। মৃত্যুর ১১ দিন পর স্ত্রী আসমা খাতুন ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেলে নবজাতকের জন্ম হয়। 

ফায়ার সার্ভিসের কর্মী নূরুল হুদার বাবা আবুল মুনসুর বলেন, ‘আমি ছেলে হারাইলাম, আমার ছেলের সন্তান জন্ম নিল এতিম হয়ে। সে তার সন্তানকে দেখে যেতে পারল না। আল্লাহ সকল পরিকল্পনাকারী। তিনিই আমার নাতিকে দেখে রাখবেন।’

স্বজনরা জানায়, নূরুল হুদার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আসমা খাতুনকে গত শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার সঙ্গে ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের লোকজনও সঙ্গে ছিলেন। চিকিৎসকরা পর্যালোচনা শেষে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন আসমা খাতুন।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী বলেন, ‘শহীদ ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদার স্ত্রীর বাচ্চা হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে স্টেশন অফিসার দেলোয়ার হোসেনের মাধ্যমে তার গ্রামের বাড়ি থেকে আমাদের এখানে নিয়ে আসি এবং অফিসে রেখেই আমার একটা টিম হাসপাতালে পাঠাই। সবকিছু নিশ্চিত করার পরে আমি সাথে গিয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক জাকিউল ইসলামের মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নুরুল হুদার স্ত্রীকে ভিআইপি মর্যাদা লেভার ওয়ার্ডে স্পেশাল একটা রুমের ব্যবস্থা করে এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটা টিম গঠন করে। টিমের মাধ্যমে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উনার অস্ত্রোপাচার সম্পন্ন হয়। হাসপাতাল কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। উনারা আমাদের শহীদ পরিবারে জন্য উদারহস্তে কাজ করেছে।’

অস্ত্রোপচারের সময় ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর রোকনুজ্জামান, স্টেশন অফিসার মো. জুলহাস উদ্দিন, ফায়ার ফাইটার মো. শাহজাহান মিয়া ও মো. আসাদুল হক উচ্চমান সহকারী ফাতেমা আক্তার, কম্পিউটার অপারেটর ফাতেমা আক্তার ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পরিবারটির পাশে ছিলেন।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল রোগী ভর্তি হওয়ার পর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মা ও নবজাতক দুজনেই ভালো আছে। দুপুরে হাসপাতালের পরিচালকসহ আমরা নবজাতক ও মায়ের খোঁজখবর নিয়েছি।’

উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গী সাহারা মার্কেট এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নিতে গিয়ে গুরুতর দগ্ধ হন ফায়ার ফাইটার মো. নুরুল হুদা। পরে তাকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। টানা দুই দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেল ২টা ৪০ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

মৃত্যুর পর ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয় উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের ধামাইল গ্রামের নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়।

তিনি চাকরিতে যোগ দেন ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ। তিনি মা, বাবা, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ এক মেয়ে ও এক ছেলে রেখে যান। নুরুল হুদার বাবার নাম আবুল মুনসুর। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। মৃত্যুর সময় নূরুল হুদা নিজের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আসমা খাতুন ১০ বছরের মেয়ে নুসরাত নেহা ও ৩ বছরের এক ছেলে আবিদ হাসানকে রেখে যান।