ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

পুলিশ ক্যাম্পে হামলা - নৌডাকাত চক্রের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান

মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৯:২৬ এএম
পুলিশ ক্যাম্পে

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় নৌডাকাত চক্র আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অবৈধ বালু ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাবলা, মান্নান, লালু, কানা জহির, রাসেল, নয়ন, পিয়াস, রিপনসহ একাধিক নৌডাকাত গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তারা কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে অপকর্ম চালিয়ে আসছে।

এর আগে ডাকাত বাবলা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় এবং গত ২৮ জুলাই শুটার মান্নানের গুলিবিদ্ধ মরদেহ মেঘনা নদীর শাখা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। একই ঘটনায় আহত মান্নানের সহযোগী হৃদয় বাঘ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ আগস্ট মারা যায়। তবে লালু, নয়ন, পিয়াস, রিপন, জহির ও রাসেল এখনো মেঘনা নদীতে সক্রিয় থেকে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।

এরই মধ্যে গত সোমবার বিকেলে গজারিয়ায় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে টহলরত পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় নয়ন-পিয়াস-লালু গ্রুপের নৌডাকাতদল। আত্মরক্ষায় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী উভয় পক্ষের মধ্যে শতাধিক গুলি বিনিময় হয়। তবে পুলিশের শক্ত অবস্থানের কারণে ডাকাতদল পিছু হটতে বাধ্য হয়। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় মেঘনায় নৌ পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ডাকাতদল চাঁদপুরের মতলব উত্তরে পালিয়ে আত্মগোপনে আছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাতভর সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে জেলা পুলিশ। জানা গেছে, গত সোমবার গভীর রাত থেকে মতলব উত্তরের বেলতলী লঞ্চঘাট, বেদে পল্লী, আশ্রয়ণ প্রকল্প, সওদাগরবাড়ি এবং চিতাখোলা এলাকায় প্রতিটি বসতবাড়ি ও ঝোপঝাড়ে তল্লাশি চালানো হয়। তবে কোথাও গুলি চালিয়ে পালিয়ে আসা দুর্ধর্ষ নৌ-ডাকাতদলের সদস্যদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মতলব সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল কবির বলেন, নৌপথে চাঁদাবাজি, ডাকাতি এবং বালুদস্যুর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালায়। পাশাপাশি মুন্সীগঞ্জ থেকে নৌপথে পালিয়ে আসা সশস্ত্র নৌ-ডাকাতদলের সদস্যদের গ্রেপ্তার করাই ছিল মূল লক্ষ্য। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা মতলব উত্তরে আশ্রয় নেয়নি, অন্যত্র অবস্থান নিয়েছে। তবে অভিযান চলমান বলে জানান তিনি।

এদিকে এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনর প্রকল্প  উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, গজারিয়ায় লুট করা অস্ত্র দিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে যৌথ বাহিনীকে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর পর থেকেই র‌্যাব-১১, মতলব উত্তর থানা পুলিশ ও গজারিয়া থানা পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল বিকেল থেকে প্রায় ৭০-৮০ জন র‌্যাব সদস্য গজারিয়ার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর এলাকার মেঘনা নদীসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। পাশাপাশি চাঁদপুরের মতলব উত্তরের বেলতলি এলাকায়ও অভিযান চলছে বলে জানা গেছে।

অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প উদ্বোধনের পর থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের উৎপাত বেড়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। গজারিয়া থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, অভিযান চলমান রয়েছে। অভিযান শেষে বিস্তারিত জানানো হবে। তবে গতকালের অভিযানে অংশ নেয়নি সেনাবাহিনী।