রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিল্লাল হোসেন, যশোর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ০১:২৯ এএম

রাতে মেলে না চিকিৎসক

বিল্লাল হোসেন, যশোর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ০১:২৯ এএম

রাতে মেলে না চিকিৎসক

  • লাভের আশায় রোগীর চিকিৎসা দেন ওয়ার্ডবয়-আয়া
  • সকালে একবার ওয়ার্ডগুলোতে রাউন্ডে যান চিকিৎসক
  • রোগীকে পুঁজি করে ক্লিনিকগুলোতে অর্থ-বাণিজ্য করেন

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখা মেলে না। ফলে সরকারি হাসপাতালে রোগীরা উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রাতে চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে কাটা-ছেঁড়া রোগী দেখলেই এগিয়ে আসেন ওয়ার্ডবয়, আয়া নতুবা ঝাড়ুদার। এতে তারা লাভবান হন। কেননা রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে তারা অর্থবাণিজ্য করেন।

জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের রোগীদের ভরসার স্থল হলো যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। যে কারণে যশোর ছাড়াও নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার রোগীরা এই হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য আসেন। হাসপাতালে ভর্তির পরই তারা চিকিৎসা নিয়ে দুর্ভোগের শিকার হন। বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও রোগীদের ভাগ্যে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা জোটে না। প্রতিদিন সকালে তারা মাত্র একবার করে ওয়ার্ডগুলোতে রাউন্ডে যান। তা-ও তড়িঘড়ি করে রাউন্ড শেষ করেন। যে কারণে অনেক রোগী তাদের রোগ নিয়ে ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। মূলত চিকিৎসকদের অনিয়মের কারণে রোগীরা সরকারি হাসপাতালে কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে অনেকেই সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে ক্লিনিকে চলে যেতে বাধ্য হন। এতে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য আরও বেড়ে যায়।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, রোগীকে পুঁজি করে ক্লিনিকগুলোতে অর্থ-বাণিজ্য জমজমাট করার জন্য চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন।

রফিকুল ইসলাম নামে রোগীর এক স্বজন জানান, সকালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দল বেঁধে রাউন্ডে আসেন। কিন্তু বেশি সময় রোগীর সঙ্গে কথা বলেন না। ব্যস্ততা দেখিয়ে দ্রুত বের হয়ে যান। এরপর সারা দিনে বিশেষজ্ঞদের আর দেখা মেলে না। রাতে ওয়ার্ডে রাউন্ড দেওয়ার কথা থাকলেও তারা রাতে রাউন্ডে আসেননা।

তিনি আরও জানান, পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে তার রোগী এক সপ্তাহের বেশি চিকিৎসাধীন। এত দিনে একটা রাতেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর ফলোআপ চিকিৎসার জন্য রাউন্ডে যাননি। রফিকুলের মতো একই কথা জানান রোগীর স্বজন রাসেল, বৃষ্টি, পারভীনা ও আশাদুল ইসলামসহ অনেকেই।

গত কয়েক দিনে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে অবস্থান করে দেখা গেছে, সড়জ দুর্ঘটনায় আহত, ছুরিকাহত, প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে অনেক রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সব রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন ইন্টার্ন। রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলেও সহকারী রেজিস্ট্রার ও বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক আসেন না। ইন্টার্ন রোগীর অবস্থা বুঝে চিকিৎসা দেন। অন্যথায় নিয়মবহির্ভূতভাবে রোগীকে অন্যত্র রেফার্ড করে দিচ্ছেন। ওই ওয়ার্ড থেকে গত ১ সপ্তাহে ২২ রোগীকে খুলনা অথবা ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রেফার্ড করা হয় যশোর শহরতলী ঝুমঝুমপুর এলাকায় ছুরিকাহত সাকিবকে (১৯)। অথচ সরকারি এই হাসপাতালে সার্জারি ও অর্থোপেডিক বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ডিগ্রিধারী চিকিৎসক রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ সেবিকা জানান, নিয়ম অনুযায়ী রোগী ভর্তির পর একজন ইন্টার্ন আসবেন। তিনি রোগীর অবস্থা দেখে অনকলে সহকারী রেজিস্ট্রারকে জানাবেন। সহকারী রেজিস্ট্রার রোগী দেখে অবস্থা খারপ মনে করলে রোস্ট্রার অনুযায়ী দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ডাকবেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী কোনো কাজ করা হয় না। তাদের অনুপস্থিতিতে করেন ইন্টার্ন।

খোঁজ নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বিশাল এক বাণিজ্য ধরা পড়েছে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের কাটা ছেড়া রোগী দেখলেই এগিয়ে আসেন ওয়ার্ডবয়, আয়া নতুবা ঝাড়ুদার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সহকারী রেজিস্ট্রারদের অনুপস্থিতিতে তারা রোগীর স্বজনদের হাতে চিকিৎসা সামগ্রী কেনার শর্ট স্লিপ ধরিয়ে দেন। এরপর সিরিঞ্জ, স্যালাইন, সুই-সুতো নিয়ে তারাই করেন চিকিৎসা। আবার ক্যানোলা, ইউরিন ব্যাগ, খাদ্য গ্রহণের পাইপ লাগানো কাজও তারা করেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সহকারী রেজিস্ট্রারসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরেও কেউ কেউ রাতে ওয়ার্ড রাউন্ডে আসেন না বলে জানতে পেরেছেন। তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!