গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে মুক্তিযোদ্ধা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে গড়ে উঠেছে বিশাল ময়লার ভাগাড়। দুর্গন্ধ, মশা-মাছির উৎপাত ও পরিবেশদূষণের কারণে কলেজের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে প্রতিদিন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের এ এলাকায় অসংখ্য শিল্প-কারখানা ও শ্রমিকপল্লী গড়ে উঠেছে। ভাড়া বাড়িগুলো থেকে প্রতিদিনের গৃহস্থালি বর্জ্য অপসারণের কোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যবস্থা না থাকায় ভাড়াটিয়ারা ৫০-১০০ টাকা দিয়ে বেসরকারি ময়লা সংগ্রাহকদের মাধ্যমে আবর্জনা মহাসড়কের পাশে ফেলে দিচ্ছেন। নিকটবর্তী বাজারের বর্জ্যও এতে যোগ হওয়ায় ধীরে ধীরে সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে বড়সড় ময়লার ভাগাড়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিদিন সকালে ফটক দিয়ে ঢোকার সময় নাকে রুমাল চেপে যেতে হয়। দুর্গন্ধ ক্লাসরুম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, ফলে পড়াশোনায় মনোযোগ রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
কলেজছাত্রী তামান্না আক্তার বলেন, ‘ফটক পার হওয়ার সময় মনে হয় যেন ময়লার ভাগারে ঢুকছি। গন্ধে মাথা ঘুরে যায়।’
অভিভাবকেরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাড়া ও ট্যাক্স দেওয়ার পরও বর্জ্য ফেলার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির কারণে সন্তানদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ ধরনের বর্জ্য ভাগাড় থেকে কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে। এতে কলেজের শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা ঝুঁকিতে পড়ছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদ ও বাড়ির মালিকেরা কেউই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব নিচ্ছেন না। ফলে কলেজ ও সাধারণ মানুষ এই অব্যবস্থাপনার শিকার হচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওসমান গনি জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করা হয়েছে এবং উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে।
ভাওয়ালগড় ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সরকার বলেন, আগেও পরিষ্কার অভিযান চালানো হয়েছিল ও সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। কিন্তু অজ্ঞাতরা সাইনবোর্ড সরিয়ে পুনরায় ময়লা ফেলছে। দ্রুত সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, বিষয়টি আগে জানা ছিল না, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর দাবি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও শিক্ষা পরিবেশের অবনতি আরও বাড়বে বলে তারা মনে করছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন