ঢাকা বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫

জীবনরক্ষার নৌকা মৃত্যুশয্যায়

গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৫, ০৪:৪১ এএম
  • ২০১৮-১৯ সালে গলাচিপায় দেওয়া হয় ২টি নৌ অ্যাম্বুলেন্স, ব্যবহার হয়নি এক দিনও
  • রক্ষণাবেক্ষণ, চালক ও তেলের বরাদ্দ না থাকায় অকেজো অবস্থায় ঘাটে পড়ে আছে
  • ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে কেনা নৌ অ্যাম্বুলেন্স এখন অপচয়ের প্রতীকে পরিণত

চারদিকে নদী, মাঝখানে ছোট্ট জনপদ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগব্যবস্থায় পিছিয়ে আছে এলাকা। হাসপাতালে যেতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লাগে নদীপথে। এমন দুর্গম এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকার দিয়েছিল দুটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু ৭ বছরে এক দিনের জন্য ব্যবহার হয়নি সেগুলো। বর্তমানে পটুয়াখালীর গলাচিপায় ঘাটে পড়ে থেকেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৪৭ লাখ টাকায় কেনা আধুনিক নৌ অ্যাম্বুলেন্স দুটি।

ট্রলারে ভর করেই গলাচিপা ও পার্শ্ববর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বিকেল ৫টার পর ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে রোগীদের রাতভর অপেক্ষা করতে হয়। অথচ জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উপজেলা হেলথ কেয়ার (ইউএইচসি) প্রকল্প থেকে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আরও ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নৌ অ্যাম্বুলেন্সের অস্তিত্বই জানেন না অনেকে। চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ফাহিম হাওলাদার বলেন, ‘নৌ অ্যাম্বুলেন্স এটা কি জিনিস, সেটাই তো জানি না!’ চরকাজলের হাতেম আকন জানান, ‘সরকারি নৌ অ্যাম্বুলেন্স আছে দুইটা, কিন্তু কোনো দিন রোগী নিয়ে চলতে দেখিনি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গলাচিপা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুলিজের মসজিদ ঘাটে ইউএইচসি প্রকল্পের নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডের লঞ্চঘাটে স্থানীয় সরকার বিভাগের দেওয়া নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে আছে। বছর বছর ঘাটে পড়ে থেকে মেশিনসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে যাচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গাবালী ও গলাচিপার চরকাজল-চরবিশ্বাস এলাকা থেকে মাসে হাজারো রোগী হাসপাতালে আসে। কিন্তু চালক নিয়োগ ও মেরামতের বাজেট না থাকায় নৌ অ্যাম্বুলেন্স চালু হয়নি। এমনকি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের একজন স্বীকার করেছেন, দুটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স আছে, এ তথ্য তাদের জানা ছিল না।

ডা. মেজবাহ উদ্দিন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাছে বরাদ্দ নেই, তেলের খরচও বেশি। তা ছাড়া গতি কম হওয়ায় মানুষ এগুলো পছন্দ করে না।’

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. খালেদুজ্জামান বলেন, ‘আমি নতুন; বিষয়টা খতিয়ে দেখছি।’ স্থানীয় সমাজকর্মী শাহাদাৎ হোসেন বুলবুল বলেন, ‘দায়িত্বশীলদের অবহেলায় চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দ কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। নৌ অ্যাম্বুলেন্স চালু থাকলে বহু মানুষের জীবন বাঁচানো যেত।’