ঢাকা বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

সাগর মিয়া, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ০১:৫৫ এএম

*** ভবনের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল, খসে পড়ছে পলেস্তারা
*** যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার ৩৮নং ধনকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে মেরামতের অভাবে ভবনের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে, দেয়ালের প্লাস্টার উঠে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চরম আতঙ্ক। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তাই এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এক শিফটে পরিচালিত এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২২০ জন শিক্ষার্থী ও ৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের একমাত্র ভরসা এই প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু তাদের শিক্ষালাভ এখন ঝুঁকির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অনেক বছর আগে নির্মিত একটি ভবনের শ্রেণিকক্ষে বসে লেখাপড়া করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ভয়ে কাঁপে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর পাঠদান অত্যন্ত বিপজ্জনক। প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মানসিক চাপও বাড়াচ্ছে।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাউজিয়া আবিদা সাওদা জানায়,‘আমাদের ক্লাসের ছাদে ফাটল আছে, মাঝে মাঝে পলেস্তারা পড়ে। ভয় লাগে, তবুও স্কুলে আসি কারণ পড়াশোনা না করলে পিছিয়ে যাব।’ ফাউজিয়ার মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে ক্লাসে বসে থাকে। বৃষ্টি হলে চুইয়ে পড়ে পানি, কখনো ছাদের টুকরো ভেঙে পড়ে টেবিলের ওপর।

অভিভাবক জিন্নাত আক্তার বলেন, ‘আমার সন্তান প্রতিদিন ভয়ে স্কুলে যায়। মনে ভয় থাকে, কখন কী ঘটে! আমরা চাই সরকার দ্রুত একটা নিরাপদ ভবন তৈরি করে দিক।’

বিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাবাসীরও একই দাবি। তারা বলেন, এই বিদ্যালয় থেকেই এলাকার অনেক সন্তান আজ বড় বড় জায়গায় কাজ করছে। অথচ বর্তমানে ভবনের এমন অবস্থা যে, ভবনের কোনো অংশ ভেঙে পড়লে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এলাকাবাসী তাই দ্রুত সংস্কার বা নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

সহকারী শিক্ষক সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, ‘বিদ্যালয়ের এ ভবনটির অবস্থা খুবই খারাপ। দুটি ভবন থাকলেও এক শিফট হওয়ায় প্রতিটি ক্লাসরুমই ব্যবহার করতে হচ্ছে। প্রতিদিন ভয় নিয়ে ক্লাস নিতে হয়। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায় নেবে কে, তা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় থাকি। তবুও শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে রাখতে ঝুঁকি নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছালমা ইয়াসমিন জানান, ‘ভবনটির বেহাল অবস্থার কথা একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে। ১৯৬৯ সালে নির্মিত ভবনটির কোনো সংস্কার হয়নি। এখন এটি সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে। আমরা চাই দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করা হোক।’ এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক জানান,‘শিগগিরই আমি বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাব। নতুন প্রকল্পে এর ভবনের প্রস্তাব পাঠানো হবে। আশা করছি বরাদ্দ পেয়ে দ্রুতই নির্মাণকাজ শুরু হবে।’