সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীর পাড় কেটে বালু লুট বন্ধে এবার নদীর তীরে বাঁশের বেড়া দেওয়া হচ্ছে। নৌকা বা বাল্কহেড যাতে পাড়ের বালু তুলতে না পারে, সে জন্য বালুমহালের ইজারাদারের পক্ষ থেকে বেড়া দেওয়া হয়। গত রোববার বিকেল থেকে লাউড়েরগড় এলাকায় নদীর তীরে বাঁশের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়।
জানা যায়, এক সপ্তাহ ধরে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় এলাকায় নদীর পাড় কেটে বালু তোলার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গত রবিবার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামররুল। পরে জেলা প্রশাসন অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন করে। বিভিন্ন সময়ে অভিযান ও জরিমানা করা হলেও বালু লুট বন্ধ হয়নি।
স্থানীয় লোকজন জানান, তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে জেলার সবচেয়ে বড় দুটি বালুমহাল রয়েছে। মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর চলতি মাসে সেখানে বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। তবে শুরুতেই ইজারার সীমানার বাইরে গিয়ে লাউড়েরগড় এলাকায় জোর করে বালু তোলার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেন ও পাহারা দেন। তবে পরে কেউ কেউ আন্দোলন থেকে সরে যান, আবার কেউ যুক্ত হন বালু তোলার সঙ্গে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বেশি লাভের আশায় স্থানীয় কিছু বাসিন্দা নদী তীরবর্তী জমি বিক্রি করে যাদুকাটার পাড় দিচ্ছেন। প্রভাবশালী একটি চক্র এসব জমি কিনে বালু বিক্রি করছে। এমনকি সরকারি জমি থেকেও বালু তোলার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের সহায়তায় এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। নদীর পাড় কেটে বালু তোলায় আশপাশের গ্রাম ও স্থাপনা হুমকির মুখে পড়ছে। পূর্বপাড়ের সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় গ্রাম এবং পশ্চিমপাড়ের শিমুলবাগান ও ঘাগটিয়া গ্রাম এখন ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যাদুকাটা নদীর দুটি বালুমহাল এবার প্রায় ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা হয়েছে। মামলাসংক্রান্ত জটিলতা কেটে যাওয়ার পর চলতি মাসে প্রশাসন ইজারাদারদের বালুমহাল বুঝিয়ে দিলে বালু উত্তোলন শুরু হয়।
বালুমহালের ইজারাদার শাহ রুবেল আহমদ জানান, নদীর পাড় কাটা বন্ধ হোক, এটা তারাও চান; কিন্তু স্থানীয় কিছু লোক টাকার লোভে নিজেদের জমি বিক্রি করে দেন। আবার আরেক পক্ষ এসব জমি কিনে পরে বালু বিক্রি করে। তিনি বলেন, এতে আমাদের বদনাম হচ্ছে। আমরা নদীর পাড় কেটে বালু তোলা বন্ধে সেখানে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের আবেদন করেছি। বালু লুট ঠেকাতে এখন বাধ্য হয়ে নদীর তীরে বাঁশের বেড়া দিচ্ছি।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান, যাদুকাটা নদীর বালুমহাল ইজারাদারকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর আমরা খবর পাই, কিছু লোক জড়ো হয়ে মব করে অবৈধভাবে নদীর তীর কেটে বালু তোলার চেষ্টা করছেন। আমরা এই অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন করি। টাস্কফোর্সে বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন আছেন। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা নদী থেকে কোনোভাবেই পরিবেশ ও এলাকার ক্ষতি করে অবৈধভাবে কাউকেই বালু উত্তোলন করতে দেব-না। ইজারাদারকেও সব নিয়ম মেনেই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।