রংপুরের মিঠাপুকুরে গিরাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার সেবিন। তার পরিবারকে একঘরে করে রাখায় গত ১৯ দিন ধরে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না তার ছোট ভাই রাইয়ান তামিমও। শুধু এই দুই শিক্ষার্থী নয়, অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ৩ পরিবারের আরও ৭ সদস্য। এ ছাড়াও হামলা ও মারধরের ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তারা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বড় হযরতপুর ইউনিয়নের গিরাই পানাতিপাড়া গ্রামে।
একঘরে হওয়া পরিবারের কর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এর জেরে তারা আমাদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন করছেন। আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। রাস্তায় মারধর ও হামলা করে। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না।
কান্না জড়িত কন্ঠে জরিনা বেগম (৫৫) বলেন, আমাদের বাড়িতে মানুষ কম। তারা হামলা-মারপিট করে, রাস্তায় বের হতে দেয় না। ছেলেরা কাজকর্ম করতে পারছেনা। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ৩ পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে দির্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে প্রতিবেশী কয়েকটি পরিবারের। এ ঘটনায় একাধিকবার হামলা, মারপিট ও মামলার ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি গিরাই গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী মৌখিকভাবে ওই ৩ পরিবারকে একঘরে করে রেখেছেন।
প্রভাবশালীদের একজন গিরাই বাজার জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসা মিয়া বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের প্রতিবেশীরা মসজিদে অভিযোগ দেয় যে, সে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায়নি। তখন আমরা তাকে (জাহাঙ্গীর) মসজিদে ডাকলাম। সে বলল, রাস্তা দিয়ে বের হলেই প্রতিবেশীরা তাদের মারপিট করে। আমরা তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে এসে আবার বাড়িতে রেখে আসতে চাইলাম। তারপরও ভয়ে সে ৫ জুমা মসজিদে আসেনি। এ কারণে সমাজের লোকেরা তাদের একঘরে করে রেখেছেন।
প্রতিবেশীরা জানান, রুস্তম আলী, আব্দুর রউফসহ কয়েকটি পরিবার রয়েছে। তারা জাহাঙ্গীর আলমসহ ৩ পরিবারকে বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। কয়েক দফা হামলা ও মারধরও করেছে। জাহাঙ্গীর আলমকে ফাঁসাতে মসজিদে সালিশ দিয়েছিল।
গিরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলনুর হোসেন বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী বেশ কয়েক দিন ধরে বিদ্যালয়ে আসছে না। একঘরে করার বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি ওকে স্কুলে নিয়ে আসব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মুলতামিস বিল্লাহ বলেন, ঘটনাটি জানি না। যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।