*** দুই সেতুর মোট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা
*** ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পালিয়ে যাওয়ায় সেতুর সুফল পাচ্ছেন না হাজারো মানুষ
ঢাকার ধামরাই উপজেলার বংশী নদীর ওপর নির্মিত দুটি সেতুর কাজ দীর্ঘ সময় ধরে সম্পন্ন না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয়রা। এরমধ্যে একটি সেতুর কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক না হওয়ায় কাঠের মই বেয়ে ওঠতে হচ্ছে স্থানীদের। অন্যটি ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি অর্ধেক কাজ। দুই সেতুর মোট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পালিয়ে যাওয়ায় সেতুর সুফল পাচ্ছেন না হাজারো মানুষ।
জানা যায়, উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের দক্ষিণ দেপাশাই মাঝিপাড়া এলাকায় ৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার পিএসসি গার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর। ২০২২ সালের ১৮ মার্চ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্মাণের পর সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক ও সেতুর উপরের অর্ধেক রেলিং না করেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘কামারজানী-আনোয়ারা (জেবি)’ উধাও হয়ে যায়। ফলে সেতুতে ওঠা-নামার জন্য স্থানীয়দের মই ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন শিক্ষার্থী, কৃষক, বয়স্ক ও কোমলপ্রাণ শিশুরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
৫নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হক জানান, ‘এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৪-৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় শিশুসহ বহু মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। উপজেলা প্রকৌশলী বলেছিলেন আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু হবে, কিন্তু এখনো কেউ আসেনি। মরার আগে সেতুটা নির্মাণ হতে দেখব এটাই এখন একমাত্র বাসনা।’
অন্যদিকে, একই ইউনিয়নের ফুকুটিয়া এলাকায় বংশী নদীর ওপর ৯০ মিটার পিএসসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৬ বছরে মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে পালিয়ে গেছে একে একে তিনজন ঠিকাদার। বর্তমানে চতুর্থ ঠিকাদারও গা-ঢাকা দিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, খরা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো, আর বর্ষায় নৌকাই একমাত্র ভরসা।
কলেজছাত্রী মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘প্রতিদিন নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। রাতে পার হতে হলে মাঝিকে খুঁজতে হয়, রাত হলে তো আরও ভয়।’ স্থানীয় শারমিন আক্তার বলেন, ‘গত বছর নৌকা ডুবে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা নষ্ট হয়েছিল। বাঁশের সাঁকো দিয়ে হাঁটাও নিরাপদ না।’ আমরা চাই এই সেতুটি দ্রুত সম্পূর্ণ হোক চলাচলের উপযোগী হোক।
সোমভাগ ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম বলেন, ‘এই সেতু না থাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী সময়মতো ক্লাসে যেতে পারে না, চাকরিজীবীরাও সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে পারেন না।’ কাজ যে কি কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে তা আমরা কেউ-ই বলতে পারছি না। এ বিষয়ে দুটি সেতুরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে ধামরাই উপজেলা প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম বলেন, ‘বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও ঠিকাদাররা গাফিলতি করছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে নতুন টেন্ডার দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন