জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরের কাঁচাবাজার ব্রিজের পূর্ব পাশে তুলশি গঙ্গা নদীর পাড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব সূর্য (ছট) পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে পুণ্যার্থীদের পদচারণায় নদীর তীর কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।
প্রতিবছর হিন্দু বর্ষপঞ্জির কার্তিক মাস বা কখনো কখনো অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে সন্ধ্যায় ও সপ্তমীর ভোরের অর্ঘ্যে উদযাপিত হয় হিন্দুদের প্রাচীন এ ছট পূজা পার্বণ। এ উপলক্ষে বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উপবাস থেকে বিভিন্ন রকম ফল-ফলান্তি, ঠেকুয়া, দুধ, প্রদীপ নিয়ে হাজির হয় নদীর পাড়ে। নদীর পানিতে ভেজা কাপড়ে বুক পর্যন্ত দাঁড়িয়ে তারা মাতা ছটের কাছে সন্তান ও পরিবারের পুণ্যের আশায় ব্রত পালন করেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে সূর্যোদয়ের পূর্বে জলে নেমে এবং সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ফল-ফলান্তি, ঠেকুয়া, দুধ, প্রদীপ, ফুল, জল দিয়ে নদীতে সূর্য দেবতার পূজা অর্চনা করেন। পূজা উপলক্ষে তুলশি গঙ্গা নদীর পাড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ছোট-বড়দের মিলন মেলায় পরিণত হয়। অপরদিকে তাদের পূজা দেখতে নদীর উভয় পাড়ে এবং ব্রিজের ওপরে হাজারো দর্শকরা ভিড় জমায়। এর আগে গতকাল সোমবার সূর্যাস্তের আগে উপবাস করে নদীতে নেমে সূর্যাস্তের পরে দুধ জল দিয়ে পূজা অর্চনার মাধ্যমে প্রার্থনা শেষে স্নান করে উঠে আসেন। সূর্যাস্তের পর সকলেই বাড়িতে ফিরে যান এবং মঙ্গলবার ভোরে সূর্যোদয়ের সময় পুনরায় নদীতে এসে সূর্য স্নানের মধ্য দিয়ে এই পূজার সমাপ্তি ঘটান।
আয়োজক কমিটিরা বলেন, ছট পূজাটি মূলত ভারতের বিহার, ঝাড়খন্ডসহ বিভিন্ন প্রদেশে প্রচলিত আছে। এই ছট পূজা অর্চনার জন্য উপবাসকারী ও ভক্তবৃন্দের নদীর পাড়ে আসার কোনো রাস্তা ব্যবস্থা না থাকায় খুব কষ্টে নদীর পাড়ে আসতে হয়।
ঋষি কুমার বলেন, প্রভু রাম যখন তার বনবাস শেষে অযোধ্যায় ফিরে আসেন। মা সীতা দেবী প্রভুর দীর্ঘায়ু কামনার জন্য এই ব্রত রাখেন। এ উপলক্ষেই সনাতন ধর্মের প্রত্যেক মা-সন্তানের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনার জন্য এ ব্রত রেখে ছট মাতার প্রতি উৎসর্গ করেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ উপজেলা শাখার সভাপতি ওমপ্রকাশ আগরওয়ালা বলেন, ছট পূজা যুগ যুগ থেকে হয়ে আসছে। পরম্পরায় তুলশি গঙ্গা নদীর পাড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীর হরিজন, রবিদাস, রজক, মাড়োয়ারীসহ সম্প্রদায়ের মানুষরা ছট মাতার কাছে পানিতে নেমে তাদের আশা পূরণের লক্ষ্যে প্রার্থনা করেন। এ ব্রত পালনে উপবাস কারিরা প্রায় ৪৮ ঘণ্টা উপবাস থাকেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন