*** চার বছর আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে চালু হয়নি কার্যক্রম
*** কার্যক্রম না থাকায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার অবকাঠামো
সরকারের ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত চুয়াডাঙ্গা বিসিক শিল্পনগরী এখন পরিত্যক্ত জঙ্গল। চার বছর আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে এখনো চালু হয়নি কার্যক্রম। ফলে কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি, বিপরীতে নষ্ট হচ্ছে সরকারি অর্থে গড়ে তোলা অবকাঠামো।
জানা যায়, ২০২১ সালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় ২৫.২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয় বিসিক শিল্পনগরী। পরের বছর ৫ ক্যাটাগরিতে ৭৮টি প্লট বরাদ্দের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর মধ্যে ৩১টি প্লট বিক্রি হলেও নানা জটিলতায় ৬ জনের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫ জন উদ্যোক্তার মধ্যে ২২ জনই খালি প্লট ফেলে রেখেছেন। কেবল ৭টি ভবন নির্মাণকাজ করলেও সেখানে মাত্র ৩টি কারখানা চালু হয়েছে।
এদিকে, দীর্ঘদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে গোটা এলাকা এখন আগাছায় ভরে গেছে। ভাঙাচোরা ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পানি নিষ্কাশনের অনিয়ম, নিরাপত্তাহীনতা ও মৌলিক অবকাঠামোর অভাবে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন। স্থানীয়রা জানান, ‘বিসিক এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করা মানে ঝুঁকির মধ্যে পড়া।’ বিসিক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০টি শিল্পকারখানা গড়ে উঠলেই নির্মাণ করা হবে এলপিজি গ্যাস স্টেশন ও অন্যান্য সুবিধা।
চুয়াডাঙ্গা বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক এবিএম আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বিসিকের শতভাগ প্লটের মধ্যে ৪০ ভাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো অল্প সময়ের মধ্যে বরাদ্দ হয়ে যাবে। যারা প্লট বরাদ্দ নিয়েও কাজ শুরু করেনি তাদেরকে বলা হয়েছে যদি সময়ের মধ্যে কাজ শুরু না করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের শিল্প-কারখানা স্থাপনে সহায়তাকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা (বিদ্যুৎ, পানি, ড্রেন, রাস্তা, কালভার্ট ইত্যাদি) সম্পন্ন এবং আর্থিক সুবিধা যেমন নারীদের ক্ষেত্রে ১৫% ও পুরুষের ক্ষেত্রে ২০% ডাউনপেমেন্ট জমা দিয়ে বিসিক শিল্পনগরী, চুয়াডাঙ্গায় বছরের দুবার অর্থাৎ জুন এবং ডিসেম্বর মাসে শিল্পপ্লট বরাদ্দ প্রদান করা হয়। আগ্রহী শিল্প উদ্যোক্তাগণ বিসিক জেলা কার্যালয়, মানিকদিহি, চুয়াডাঙ্গা বরাবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হয়। বিসিকে আসার সবচেয়ে বড় সুবিধা ১৫%-২০% ডাউনপেমেন্ট দিয়ে প্লটগ্রহিতারা কারখানা নির্মাণ করে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে পারবেন। ইন্টারেস্ট রেট ৫%। ছয় মাস পর পর ১২-২৪টি কিস্তি দিয়ে অবশিষ্ট টাকা ৬-৭ বছরে পরিশোধ করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, সরকারের ৪১ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ শিল্পনগরী চালু না হওয়ায় এখন তা আগাছায় আচ্ছাদিত ও নির্জীব পড়ে আছে- যেন এক পরিত্যক্ত প্রকল্পের দৃষ্টান্ত।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন