অন্ধকার রাত, আলো নেই। ব্যারিকেড নেই, তদারকিও নেই। এমন রাতের আঁধারে খুলনার পাইকগাছায় সড়কে বিটুমিন (তেল) ঢেলে কার্পেটিং করার সময় কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, নি¤œমানের ইট-খোয়া দিয়ে নিচের কাজ শেষ করে এখন রাতের অন্ধকারকে ঢাল বানিয়ে তড়িঘড়ি করে কার্পেটিংয়ের চেষ্টা চলছে, যার সবই নিয়মবহির্ভূত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাইকগাছা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিববাটি এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২ (আইইউআইডিপি-২)-এর অধীনে বায়তুর জামে মসজিদ থেকে টিটিসি কলেজ (অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্প) পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার সড়ক সংস্কারের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৭০ লাখ টাকার বেশি বাজেটের এই প্রকল্পে রাতের আঁধারে গোপনে বিটুমিন ঢেলে কার্পেটিংয়ের প্রস্তুতি নেওয়ায় স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে কার্পেটিংয়ের প্রস্তুতি নিতে গেলে এলাকাবাসী বাধা দেয়। তাদের অভিযোগ, নি¤œমানের ইট-খোয়া দিয়ে মূল কাজ শেষ করার পর এখন রাতকে ঢাল বানিয়ে দ্রুত কার্পেটিংয়ের চেষ্টা চলছে।
তারা বলছেন, দিনের বেলায় করলে অনিয়ম ধরা পড়ে যাবে ভেবেই রাতের অন্ধকারে সড়কে তেল ঢালা হচ্ছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে, আর এমন নি¤œমানের কাজ করলে ৬ মাসও সড়কটি টিকবে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মহিবুল্লাহ বলেন, ‘এর আগেও এই সড়কে দুই নাম্বার খোয়া দিয়ে কাজ হয়েছিল। ইউএনও দেখে গেছেন, পত্র-পত্রিকায় নিউজও হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে কোথাও বিটুমিন ছিল না, অথচ অন্ধকার নামতেই কাজ শুরু।’
আরেক বাসিন্দা তানভীর হোসেন বলেন, ‘নি¤œমানের ইট দিয়ে নিচের কাজ করেছে, এখন রাতে বিটুমিন ঢালছে। কোথাও পড়ছে, কোথাও পড়ছে না। অথচ সড়ক তদারকিতে সরকারি কর্মকর্তা উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও কোনো কর্মকর্তাই নেই।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে কাজ করতে হলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক যেমন- পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা, ব্যারিকেড, সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ও তদারকি প্রকৌশলীর উপস্থিতি। কিন্তু পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিববাটিতে এসবের কিছুই ছিল না। অন্ধকারে শ্রমিকের কাজ করা, দুই পাশে সতর্কীকরণ সাইনের অনুপস্থিতি- সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে কাজের মান নিয়ে।
স্থানীয়দের দাবি, পাইকগাছায় বেশ কিছু সড়ক নির্মাণের পর কয়েক মাস না যেতেই পিচ-পাথর উঠে গেছে। তাই এবারও রাতের আঁধারে কাজ দেখে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জানান দরাতে চুরি হয়, এখন রাস্তা নির্মাণও হচ্ছে রাতে’ এটা কিসের উন্নয়ন?
জনগণের প্রশ্ন- তদারকি বিভাগ কোথায়? মানুষ জানতে চাইছে, রাতে কাজের অনুমতি কে দিল? মান যাচাইকারী প্রকৌশলী ছিলেন কোথায়? বিটুমিনের গ্রেড পরীক্ষা হয়েছে কি? নি¤œমানের ইট-খোয়ার অভিযোগ যাচাই হলো না কেন? ঠিকাদার দিনের আলো এড়িয়ে চলছে কেন?
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবুরাম বলেন, ‘পৌরসভার কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়েই কাজ হচ্ছে। তাদের উপস্থিতিতেই কাজ শুরু হয়েছে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নুর আহমদ বলেন, ‘আমাদের লোকজন ছিল। এলাকা ব্যস্ত বিধায় রাতে কাজ করা হচ্ছে। বিষয়টি আমার জানা আছে। কাজ বিকেলেও করা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। রাতে কাজের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। কেন এমন কাজ করা হলো তার জবাব দিতে হবে। তদন্তের পরই কাজ শুরু করা হবে।’

