*** সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে আলু রোপণ ও জমি তৈরির কাজ
*** কিষানিরা আলুর বীজ কেটে করছেন বাড়তি আয়
লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে রাজশাহীর তানোরে আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিষান-কিষানিরা। গত মৌসুমে আলুতে ব্যাপকহারে লোকসান গুনতে হয়েছে চাষিদের। সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে পুনরায় রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন আলু চাষিরা। যেন দম ফেলানোর সময় নাই। খাওয়া-দাওয়াও চলছে জমিতেই। কে কার আগে জমি রোপণ করতে পারে সেই প্রতিযোগিতা চলছে চাষি থেকে শুরু করে শ্রমিকদের মাঝে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে আলু রোপণ ও জমি তৈরির কাজ। এ ছাড়াও বাড়ির আঙিনায় বীজ আলু কাটতে কিষানিরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এতে করে কিষানিরা আলুর বীজ কেটে বাড়তি আয় করছেন। ফলে উপজেলার প্রতিটি মাঠে আলু রোপণের ধুম পড়েছে।
তানোর পৌর সদরের আলু চাষি মনির জানান, গত মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রচুর পরিমাণে লোকসান গুনতে হয়েছে। কিন্তু চাষাবাদ ছাড়া উপায় না। বিঘায় ১০-১২ হাজার টাকা করে পেয়েছি। বাকিটা লোকসান। এবারে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আলু রোপণ করব।
বাক্কার নামের আরেক চাষি জানান, গত মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। জমি থেকে আলু বিক্রি করার কারণে কিছুটা লোকসান কম হয়েছে। যারা লাভের আসায় হিমাগারে রেখেছিল তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে ব্যাপকহারে। কারণ হিমাগারে ৬ টাকা কেজি ভাড়া, শ্রমিক ও বহন খরচ দিতে হয়েছে। কিন্তু একশ বস্তায় আলু মেলেছে ৬০-৭০ বস্তা। বাকিটা পচে নষ্ট হয়েছে। অথচ ভাড়া দিতে হয়েছে একশ বস্তার। মুন্ডুমালা পৌর এলাকার চাষি মিজান জানান, গত মৌসুমে ২৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রায় ২৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এ কারণে কমিয়ে এবারে ১২ বিঘা জমিতে আলু রোপণের কাজ চলছে।
উপজেলার সিন্দুকাই, গুবিরপাড়া, চাপড়া, কালনা, নারায়ণপুর, ধানতৈড়, আমশো, জিওল, চাঁদপুর, সিধাইড়, কালীগঞ্জ, রাতৈল, কাসারদিঘি, গোকুল, আড়াদিঘি, লালপুর, মোহর, কৃঞ্চপুর, পাঠাকাটা, চিমনা, দুবইল, সাহাপুর, কৈল, যোগিশো, কুযিশহর, আজিজপুর, তালন্দ, হাতিশাইল কামারগাঁ, সরনজাই, লবলবি, তাতিহাটি, শুকদেবপুর, দরগাডাঙ্গা, কলমা, চন্দনকোঠা, মাদারিপুর, জমশেদপুর পুর, ধানোরা, গাল্লা, বৈদ্যপুরসহ প্রায় মাঠে আলু রোপণের কাজ চলছে জোরালোভাবে। এ ছাড়াও প্রজেক্টে বা বাড়ির আঙিনায় আলুর বীজ কেটে বাড়তি আয় করছেন কিষানিরা। ৫০-৬০ কেজির প্রতি বস্তা ৫০ টাকায় কেটে দিচ্ছেন। আবার যারা দু-পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করবেন তাদের আলুর বীজ বাড়ির গৃহিণীরা কেটে দিচ্ছে। যার কারণে কিছুটা কম হচ্ছে খরচ। তবে এর পরিমাণ অনেক কম।
চাষিরা জানায়, সব ধরনের সারের দাম আলু রোপণের সময় বাড়তি টাকা। প্রতি মৌসুমে সার নিয়ে বেপরোয়া সিন্ডিকেট চলে। সরকারি মূল্যে মিলে না সার। আর সরকারি হিসেবে সার প্রয়োগ করলে আলুর ফলন পাওয়া যায় না। চারদিক দিয়ে ভোগান্তির শেষ থেকে না। অথচ বিক্রির সময় ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায়। এবার লাভের আশায় আলু রোপণ করা হচ্ছে। কিন্তু গত মৌসুমের মতো লোকসান গুনতে হলে আগামীতে আলু চাষ কমে যাবে।
শ্রমিক মোস্তফা, সাদিকুল শহিদুলসহ অনেকে জানান, ফজরের জানের পরেই জমি রোপণ করতে যায়। মাগরিবের আজানের সময় কাজ শেষ হয়। ৪ হাজার টাকা বিঘা রোপণ করা হচ্ছে। এতে করে দিনে শ্রমিক প্রতি ১৩০০-১৫০০ টাকা থেকে ঊর্ধ্বে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে সংসারে সচ্ছলতা আসছে। বছরে আলুর কাজ করে শ্রমিকরা মোটা টাকা আয় করে থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, গত মৌসুমে এ উপজেলায় আলু চাষ হয়েছিল ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে ১২ হাজার ১৯০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে ১২০০ হেক্টর কম জমিতে আলু চাষ হবে। এ পর্যন্ত ৭ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও পৌর এলাকার রহিমা ডাঙ্গায় আগাম আলু চাষ হয়েছে ৪৫ হেক্টর জমিতে। যা অল্প কিছু দিনের মধ্যে উত্তোলন হবে। তিনি আরও জানান, আলু রোপণ শেষ হয়ে যেত। কিন্তু নভেম্বরের শুরুতে এক রাতের রেকর্ড পরিমাণ ভারি বৃষ্টির কারণে রোপা আমন ধান কাটতে দেরি হয়েছে। মূলত এ কারণেই আলু রোপণে সময় লাগছে। কারণ মাটি ভিজে রসালো হয়ে আছে। তবে আশার কথা আবহাওয়া আলু রোপণের অনুকূলে থাকার কারণে কোমর বেঁধে রোপণ করছেন চাষিরা।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন