অগ্রহায়ণের শেষভাগে সকালের হালকা শীত আর শিশিরভেজা ঘাসে হেমন্ত শেষে শীতের বার্তা জানান দিচ্ছে। এই সময়ে রূপগঞ্জের গন্ধবপুর, নওগাঁও, ইছাপুরাসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে কুমড়া বড়ির তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা। উঠানজুড়ে সারি সারি টিন, আর তাতে গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কুমড়া ও ডালের বড়ি।
শীত এলেই বাড়ে এর চাহিদা। মাছ, শাক-সবজির তরকারিতে স্বাদ বাড়ানো এই বড়ি গ্রাম-বাংলার দীর্ঘদিনের রান্নাঘরের ঐতিহ্য। রূপগঞ্জ উপজেলার ইছাপুরা, গন্ধবপুর, নওগাঁও, বারোবিঘা, নিমেরটেক, টান মুশরী ও কাঞ্চনসহ ছয় গ্রামের প্রায় ৭৫টি পরিবার এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই এই এলাকার নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন কুমড়ো বড়ি তৈরিতে। এতে বাড়তি আয়ের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন তারা। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় বড়ি তৈরির প্রস্তুতি। উঠান পরিষ্কার, টিনে তেলের প্রলেপ, ভেজানো ডাল মিহি করা সবকিছু চলে সমন্বিতভাবে। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এমনকি শিশুরাও কোনো না কোনোভাবে এই কাজে অংশ নেয়। ডাল, চালকুমড়া, কালোজিরা, গোলমরিচসহ বিভিন্ন মসলা মিশিয়ে তৈরি করা হয় বড়ি; তারপর শীতের রৌদ্রে ২-৩ দিন শুকিয়ে বাজারে পাঠানো হয়।
দেশের বাইরে এসব বড়ির সুনামও কম নয়। স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে রূপগঞ্জের বড়ি এখন পৌঁছে যাচ্ছে দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে। প্রবাসী বাঙালিদের খাবার তালিকায় রয়েছে এর বিশেষ চাহিদা। স্থানীয় সূত্র জানায়, ছয় গ্রামের পরিবারগুলো মাসে ৪ হাজার ২০০-৪ হাজার ৩০০ কেজি বড়ি উৎপাদন করে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮০-৮৫ লাখ টাকা।
কারিগরদের অভিযোগ, ডালের দাম বাড়ায় লাভ কমে গেছে। তবুও পেশা ছাড়ছেন না কেউ। কুমড়া বড়ি প্রস্তুতকারক অনুপ সাহা বলেন, ‘শীত এলেই বড়ির চাহিদা বাড়ে। এখন মেশিনে ডাল ভাঙানো হয়, তাই আগের মতো কষ্ট থাকে না।’ ২৫ বছরের অভিজ্ঞ কারিগর লিপি রাণী দাস বলেন, ‘আগে শিলপাটায় ডাল বাটতে খুব পরিশ্রম হতো। এখন কাজ কিছুটা সহজ হয়েছে, তবে খরচও বেড়েছে।’ গিতা রাণী দাস জানান, মৌসুমের চার মাসে ঘরে বসে কাজ করেই মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করা যায়। পাইকারি বাজারে ডালের ধরন অনুযায়ী প্রতি কেজি বড়ি ১৮০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
পাইকার বজন চন্দ্র দাস ও প্রদীপ বিশ্বাস জানান, রূপগঞ্জের বড়ির মান ভালো হওয়ায় সারাদেশে এর চাহিদা বাড়ছে। শুধু একটি খাবার নয়, ডাল ও কুমড়ার বড়ি এখন গ্রামীণ নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের বড় হাতিয়ার। শীতের রোদে শুকানো প্রতিটি বড়িতে জড়িয়ে আছে পরিশ্রম, স্বপ্ন আর শত শত পরিবারের জীবিকা পরিবর্তনের গল্প।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন