বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ ফল

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ ফল

স্মরণকালের মধ্যে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় হয়েছে। বিগত দেড় দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে পাসের হার ও জিপিএ-৫ বাড়তে থাকলেও এবার তা পুরো উল্টে গেছে। চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ০৩ শতাংশ আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী। গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ আর জিপিএ-৫ কমেছে ৪৩ হাজার ৯৭টি। দেড় দশক আগেও ২০১০ সালে পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। সেই বছরের তুলনায়ও এবার পাসের হার কমেছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০১০ সাল থেকে পাসের হার বাড়তে থাকার পর ২০২১ সালে পাসের হার দাঁড়ায় ৯৩ দশমিক ৬ শতাংশে, যা এযাবৎকালের রেকর্ড। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের পাশাপাশি বরিশাল ও ময়মনসিংহ বোর্ডের ফল বিপর্যয় এবং কেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় কড়াকড়ি আরোপ ও পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে এবার উদারনীতি না থাকার কারণে এই ফল বিপর্যয় হয়েছে। তবে শিক্ষা বোর্ডগুলো বলছে, এবার যে ফল প্রকাশ করা হয়েছে, তা প্রকৃত ও সত্য ফল। ফলাফলে মেধার প্রকৃত মূল্যায়নের শতভাগ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। পরীক্ষকদেরও সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে সন্দেহ-সংশয় ও ক্ষোভের সুযোগ নেই।
গতকাল বেলা ২টায় রাজধানীর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির। ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের পর এবারের এসএসসি ছিল বাংলাদেশে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। অন্যান্য বছরের মতো ফলাফল প্রকাশের আগে পরীক্ষার সারসংক্ষেপ এবং পরিসংখ্যান সরকারপ্রধানের কাছে হস্তান্তর করার কোনো অনুষ্ঠান ছিল না।
ফলাফলের সার্বিক চিত্র: এবার দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৩০ হাজার ৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ, ফেল করেছে ৬ লাখ ৬৬০ পরীক্ষার্থী।
এর মধ্যে ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৮ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিলে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৫৭২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ১১৫ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৬৬ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল  ভোকেশনালে ১ লাখ ৩৮ হাজার ২০৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৭ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। পাসের হার ৭৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৯৪৮ জন। 
বরাবরের মতো এবারও এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে। এবার মেয়েদের পাসের হার ৭১ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং ছেলেদের ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ছেলেদের থেকে এবার মেয়েদের পাসের হার ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি। এর আগে গত বছর মেয়েদের পাসের হার ছিল ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং ছেলেদের ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৭৩ হাজার ৬১৬ জন আর ছাত্র ৬৫ হাজার ৪১৬ জন। ছেলেদের থেকে এবার মেয়েরা ৮ হাজার ২০০-এর বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ ছাড়া বিদেশের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে এবার ৪২৭ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ৩৭৩ জন পাস করেছে। পাসের হার ৮৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। 
পাসের হারে শীর্ষে রাজশাহী, তলানিতে বরিশাল: পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এই বোর্ডে ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর সবচেয়ে কম পাস করেছে বরিশাল বোর্ডে, ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর সামান্য কিছু বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছে ময়মনসিংহ বোর্ডে। এই বোর্ডে ৫৮ দশমিক ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর আগে ২০২৪ সালে যশোর বোর্ডে সবচেয়ে বেশি, ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। আর সবচেয়ে কম পাসের হার ছিল সিলেট বোর্ডে, ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। 
অন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৬৭ দশমিক ৫১ শতাংশ, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে পাসের ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ৭২ দশমিক ০৭ শতাংশ, সিলেট শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৬৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে পাসের ৬৭ দশমিক ০৩ শতাংশ, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ৬৮ দশমিক ০৯ শতাংশ আর কারিগরি বোর্ডে ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। 
বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকার শিক্ষার্থীরা, কম বরিশালে: প্রতিবারের মতো এবারও জিপিএ-৫-এ সবার ওপরে রয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ শিক্ষা বোর্ডের ৩৭ হাজার ৬৮ জন শিক্ষার্থী পূর্ণ জিপিএ-৫ পেয়েছে। জিপিএ-৫-এর তালিকায়ও সবার নিচে বরিশাল বোর্ড। এই বোর্ডে ৩ হাজার ১১৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। 
এর বাইরে চট্টগ্রাম বোর্ডে ১১ হাজার ৮৪৩ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ৯ হাজার ৯০২ জন, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬ হাজার ৬৭৮ জন, যশোর বোর্ডে ১৫ হাজার ৪১০ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ১৫ হাজার ৬২ জন, সিলেট বোর্ডে ৩ হাজার ৬১৪ জন, রাজশাহী বোর্ডে ২২ হাজার ৩২৭ জন, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ৯ হাজার ৬৬ জন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৪ হাজার ৯৪৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
১৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবাই ফেল, শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান কমেছে ১ হাজার ৯৮৪টি: চলতি বছর ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৫১। আর শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। 
শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। এবার দেশের মাত্র ৯৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এর আগে গত বছর শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৬৮টি। সেই হিসাবে এবার শতভাগ পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমেছে ১ হাজার ৯৮৪টি।
টানা ১০ বছর পাস ও জিপিএ-৫-এ এগিয়ে মেয়েরা: চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ নিয়ে টানা ১০ বছর এসএসসিতে পাসের হারে এগিয়ে ছাত্রীরা। বিগত ১১ বছরের এসএসসি ও সমমানের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবশেষ ২০১৫ সালে ছাত্রীদের চেয়ে পাসের হারে এগিয়ে ছিল ছাত্ররা। সে বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ। তার মধ্যে ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এরপর থেকে প্রতি বছর পাসের হারে এগিয়ে ছাত্রীরা। 
ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু আজ: চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে কোনো পরীক্ষার্থী অসন্তুষ্ট হলে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবে। এই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে আজ শুক্রবার। চলবে আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত।
শুধু টেলিটক সিম ব্যবহার করে তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ের জন্য নির্ধারিত আবেদন ফি লাগবে ১৫০ টাকা। পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করতে হবে আরএসসি <স্পেস> বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর <স্পেস> রোল নম্বর <স্পেস> বিষয় কোড এবং পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। একাধিক বিষয়ের কোড লিখতে হলে কমা (,) দিয়ে আলাদা করতে হবে। যেমন- ১০১,১০২।
চলতি বছর পরীক্ষা ১০ এপ্রিল থেকে ১৫ মে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ২০২৪ সালের তুলনায় এবার প্রায় ১ লাখ পরীক্ষার্থী কম ছিল।

ফলাফলের সার্বিক পর্যালোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, কোনো শিক্ষার্থী ফেল করুক তা কারো কাম্য নয়। এতে সরকার, পরিবার সবার ক্ষতি। তবে এবারের ফলের সঙ্গে বাস্তবতার কিছুটা মিল আছে। কারণ আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে পড়াশোনা করানোর কথা তা খুব একটা করে না। এবার একটু টাইট দেওয়ায় পাসের হার কমে এসেছে। তবে এক বছর খারাপ ফল হলে পরের বছর ফল ভালো হবে। শিক্ষকরা পড়াশোনা করাতে মনোযোগী হবেন।
তিনি আরও বলেন, এবার রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, আরেকটা অংশ দুই-একটা পরীক্ষা দিয়ে আর পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এগুলো ফল খারাপের বড় কারণ। এই ফল বিশ্লেষণের জন্য একটা কমিটি করা প্রয়োজন। যদি ঠিকমতো বিশ্লেষণ করা যায়, তাহলে কেন খারাপ হচ্ছে, আগামীতে কি করা প্রয়োজন তা বের হয়ে আসবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!