বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম

আধুনিকতা ও ইসলাম: সংঘর্ষ নয়, সহাবস্থানের পথ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম

আধুনিকতা ও ইসলাম: সংঘর্ষ নয়, সহাবস্থানের পথ

শিক্ষার্থী ফুলছড়ি সরকারি কলেজ
আজকের পৃথিবী এক ‘আধুনিক’ যুগে প্রবেশ করেছেÑ যেখানে প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, গণতন্ত্র, নারী অধিকার, বিশ্বায়ন ও তথ্যের বিস্ফোরণ আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই আধুনিকতার সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক কী? ইসলাম কি আধুনিকতার পরিপন্থি, না কি এটি সময়ের দাবি পূরণে সক্ষম একটি চিরন্তন জীবনব্যবস্থা? এই প্রশ্নটি শুধুই একাডেমিক নয়, বরং মুসলিম সমাজের সংস্কৃতি, শিক্ষা, রাজনীতি ও আত্মপরিচয়ের গভীরে প্রোথিত। 
প্রথমেই একটি ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে হবেÑ আধুনিকতা মানেই পশ্চিমা সংস্কৃতি নয়, আর ইসলাম মানেই অতীতের ছায়ায় বন্দি থাকা নয়। ইসলাম যেমন এক সময় সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু ছিলÑ আব্বাসীয় যুগে যখন মুসলিম বিশ্ব বিজ্ঞানের, চিকিৎসার, দর্শনের, গণিত ও নৈতিকতার অগ্রদূত ছিলÑ তেমনি আজও ইসলাম সেই আলো বহন করতে পারে, যদি আমরা তার মূল চেতনাকে বুঝতে পারি। 
ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধ যেমন জ্ঞানার্জন, চিন্তা-গবেষণা, ন্যায়বিচার, নারী ও পুরুষের মর্যাদা, দয়া, আন্তরিকতা ও মানবতাÑএসব কিছুই আধুনিক বিশ্বেও গ্রহণযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক। পবিত্র কোরআন ১৪০০ বছর আগেই বলেছিল, ‘পাঠ কর, তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন’ (সুরা আল-আলাক, ৯৬:১)। এই প্রথম আয়াতই আমাদের জ্ঞানের দিগন্তে আহ্বান জানায়, যা আধুনিক চিন্তাধারার ভিত্তি।
তবে সমস্যা তখনই তৈরি হয়, যখন আধুনিকতার নামে ধর্মবিমুখতা, নৈতিক অবক্ষয়, যৌন মুক্ততা, ভোগবাদিতা ও পারিবারিক বন্ধনের বিপর্যয়কে সভ্যতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়। ইসলাম এই ধরনের ‘নব্য আধুনিকতা’র বিরোধিতা করে, কারণ এগুলো মানবজীবনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। ইসলাম আধুনিক প্রযুক্তি, চিকিৎসা, প্রশাসন বা সামাজিক উন্নয়নের বিপরীত নয়, বরং এসব ক্ষেত্রেও নৈতিকতার ভারসাম্য রেখে পথ প্রদর্শন করতে চায়।
এখানে একটি বাস্তব উদাহরণ টেনে আনা যায়। বর্তমানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো তথ্যপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকলেও মালয়েশিয়া, তুরস্ক কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরাত দেখিয়ে দিয়েছে যে আধুনিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামো গড়ার সঙ্গে ইসলামি মূল্যবোধ একত্রে টিকে থাকতে পারে। একইভাবে, মুসলিম নারীরা যখন হিজাব পরে উচ্চশিক্ষায়, চিকিৎসায়, সাংবাদিকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তখন বোঝা যায়Ñ ইসলাম নারী উন্নয়নের প্রতিবন্ধক নয়।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে কেন কিছু ইসলামি সমাজে নারীর অধিকার, বাকস্বাধীনতা, বা বিজ্ঞানচর্চায় প্রতিবন্ধকতা দেখা যায়? এর উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের বুঝতে হবে, এসব সমস্যা ইসলামের কারণে নয়Ñ বরং তা ইসলামি শিক্ষার অপব্যাখ্যা, সমাজ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগের ফসল।
ইসলাম তার মূল শিক্ষায় এক ধরনের ‘চিরায়ত আধুনিকতা’ ধারণ করেÑযা সময়ের সঙ্গে অভিযোজিত হয়, কিন্তু আদর্শচ্যুত হয় না। যেমন- প্রযুক্তির ব্যবহারে ইসলাম বাধা দেয় না, বরং তার নৈতিক ব্যবহার শিক্ষা দেয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু অপসংস্কৃতি ও পর্নোগ্রাফির প্রচার রোধ করতে হবে। ডিজিটাল অর্থনীতিকে গ্রহণ করা যাবে, কিন্তু সুদভিত্তিক ব্যবস্থার বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে।
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। একপাশে বিজ্ঞান, গণিত ও প্রযুক্তি শিখে আমরা বিশ্বে টিকে থাকতে পারি; অপরপাশে কোরআন, হাদিস, ইসলামি ইতিহাস ও নৈতিকতা শিখে আমরা আত্মিকভাবে উন্নত হতে পারি। উভয়ের সমন্বয়েই গড়ে উঠবে ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ।
আজকের মুসলিম তরুণ সমাজের সামনে বড় দায়িত্বÑতারা যেন নিজ পরিচয় হারিয়ে ‘পশ্চিমমুখী আধুনিকতা’তে ভেসে না যায়, আবার এমন কট্টরপন্থায়ও না ঝুঁকে পড়ে যা ইসলামকেও অসহিষ্ণু ও অগ্রহণযোগ্য করে তোলে। তাদের বুঝতে হবেÑইসলাম আধুনিকতা বিরোধী নয়, বরং সত্যিকারের আধুনিকতাকে মূল্যবোধের আলোকে পথ দেখায়।
শেষ কথা, ইসলাম ও আধুনিকতা পরস্পরের প্রতিপক্ষ নয়। বরং ইসলাম এমন এক জীবনবিধান, যা সময়ের পরিবর্তনে নিজেকে যুগোপযোগী করে তোলে। তাই প্রয়োজনÑশুদ্ধভাবে ইসলামের শিক্ষাকে বোঝা, আধুনিক জ্ঞানকে গ্রহণ করা, এবং দুয়ের মধ্যে এক মানবিক, মূল্যবোধভিত্তিক সমন্বয় গড়ে তোলা। এটাই হবে ‘ইসলামি আধুনিকতা’Ñযা শুধু মুসলিম বিশ্ব নয়, গোটা মানবজাতির জন্য একটি বিকল্প ও পূর্ণাঙ্গ পথ হতে পারে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!