ওভালে চলমান ইংল্যান্ড ও ভারতের মধ্যকার টেস্টে দুই দলের কথার লড়াইও ঝাঁজ ছড়াচ্ছে। টেস্টের দ্বিতীয় দিনের ঘটনা। জ্যাক ক্রলির বিদায়ের পর রুট যখন ক্রিজে যান, ইংল্যান্ড তখন বেশ শক্ত অবস্থানে।
ভারতের ২২৪ রানের জবাবে ইংলিশদের রান ২ উইকেটে ১২৯। রুটকে প্রথম বলেই বেশ অস্বস্তিতে ফেলেন প্রসিদ্ধ।
বল ছোবল দেয় তার গ্লাভসে। ৩ বল পর ক্রস-সিম ডেলিভারিতে রুটকে পরাস্ত করেন প্রসিদ্ধ। তারপর এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা বলেন ভারতীয় পেসার। পরের বলেই চার মারেন রুট। শুধু ব্যাটে নয়, জবাব দেন তিনি মুখেও। প্রসিদ্ধের সঙ্গে যোগ দেন তার পেস আক্রমণের সঙ্গী আকাশ দিপ, মোহাম্মাদ সিরাজও। বেশ একচোট কথার লড়াই হয়ে যায়। মিনিট দুয়েক ধরে চলে তা। আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনার হস্তক্ষেপে তখন শান্ত হয় পরিস্থিতি। কখনো দৃষ্টিতে, কখনো শরীরী ভাষায়, কখনো মুখের ভাষায় সেই লড়াই চলতে থাকে।
প্রসিদ্ধকে সতর্কও করে দেন আম্পায়ার। রুট শেষ পর্যন্ত সিরাজের বলে আউট হয়ে যান ২৯ রান করে। ধারাভাষ্যে দিনেশ কার্তিক বারবার বলছিলেন, জো রুটকে সাধারণত এতটা তেতে উঠতে খুব একটা দেখা যায় না। আরেক ধারাভাষ্যকার মাইক আথারটনও বলছিলেন, সদাহাস্য রুটের এমন ক্ষেপে ওঠা বেশ বিরল ব্যাপার। এতেই পরিষ্কার, কতটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন রুট। শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হন ২৯ রানে। দিনের খেলা শেষে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা জানালেন, ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যানকে নাড়িয়ে দিতে এসব ছিল তাদের পরিকল্পনারই অংশ।
ইংল্যান্ডের সফলতম ব্যাটসম্যান, সিরিজে যিনি চার শতাধিক রান করেছেন, তাকে বড় ইনিংস খেলতে না দেওয়া ছিল ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ৪ উইকেট নেওয়া প্রসিদ্ধ, যিনি কথার লড়াইয়ের সূচনা করেছিলেন, দিনের খেলা শেষে তিনি বিবিসি টেস্ট ম্যাচ স্পেশালকে জানান, রুটকে তিনি স্রেফ বলেছিলেন, ণড়ঁ ধৎব ষড়ড়শরহম রহ মৎবধঃ ংযধঢ়ব. এতেই নাকি চটে যান রুট! প্রসিদ্ধ তাতে কিছুটা চমকেও যান। তিনি বলেন, ‘জানি না রুট কেন করেছে (পাল্টা প্রতিক্রিয়া)।
আমি স্রেফ বলেছিলাম, তোমাকে বেশ ভালো ছন্দে দেখাচ্ছে এবং এরপর সেটি রূপ নেয় অনেক অনেক গালাগাল এবং অন্য সবকিছুতে।’ প্রসিদ্ধ ও ভারতীয়রা বেশ খুশিই হন রুটকে কথার লড়াইয়ে জড়াতে দেখে। তার মনোযোগ নাড়িয়ে দেওয়াই যে ছিল ভারতীয়দের পরিকল্পনা! তবে এত দ্রুত তাকে ফাঁদে পা দিতে দেখে বিস্ময়ের কথা আবারও বললেন প্রসিদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘এটাই ছিল পরিকল্পনা। তবে ভাবতে পারিনি, স্রেফ কয়েকটি শব্দ বলাতেই সে এত বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাবে।’ রুটের জন্য প্রতিপক্ষের এমন পরিকল্পনা এমনিতে নতুন নয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তিনি এসবকে পাত্তা দেন না। তার মুখে হাসি তো লেগেই থাকে, এসব ক্ষেত্রেও সাধারণত হাসির বর্ম দিয়ে নিজেকে আড়াল করেন তিনি।
কথার লড়াইয়ে সেভাবে জড়ানোর নজির খুব একটা নেই তার। তবে এদিন দেখা যায় ভিন্ন রুটকে, সেটি ফুটে উঠল সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কোচ সাবেক ওপেনার মার্কাস ট্রেসকোথিকের কথায়। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, তারা কিছু বলেছিল, তাই না? সে (প্রসিদ্ধ) চেয়েছিল তার (রুট) ওপর কিছুটা চড়াও হয়ে তাকে তাতিয়ে দিতে।
হয়তো তারা তাকে গত দুই টেস্টে এতটা ভালো খেলতে দেখেছে যে, এবার ভিন্ন একটা পথ বেছে নিয়েছে এবং জো (রুট) পাল্টা জবাব দিয়েছে, কখনো কখনো যা সে করে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমনিতে সে এমন একজন, যে এসব হেসে উড়িয়ে দেয় বা মুখ চেপে হাসে এবং এসবকে তার মতো করেই এগোতে দেয়। তবে সে ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে। এ ধরনের ব্যাপার সামলাতে সবারই নিজস্ব পথ আছে, তাই না? জো (রুট) পাল্টা ছোবল দিতে চেয়েছে।’