ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫

ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশ

মাঠে ময়দানে প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৫, ০১:২৫ এএম

আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চ ভারত ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে হবে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের দশম আসর। এই বিশ^কাপ ঘিরে অনেক আগেই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), যে কারণে এখন দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে বিশ^কাপের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, বাংলাদেশের ব্যাটিং বিভাগ নিয়ে ততই দুশ্চিন্তা বাড়ছে। যদিও কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ভালো সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের গ্রাফটা ঊর্ধ্বমুখী বাংলাদেশের।

গত মে-জুনে পাকিস্তানের মাটিতে তিন ম্যাচ সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারের দুঃস্মৃতি জন্ম দিয়েছে লিটন দাসরা। এ দুটি সিরিজ বাদ দিলে এ বছর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে যাচ্ছে টাইগাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের আগ পর্যন্ত চলতি বছর মোট ২৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। এর মধ্যে ১৪টি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ। ১১টি ম্যাচে হারের রেকর্ড। তবে যে ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ হেরেছে, সেখানে ব্যাটিং ব্যর্থতার গল্পই রচিত হয়েছে। হঠাৎ করে ব্যাটিংয়ে ধস নামার যে পুরোনো রোগ, সেটি যেকোনো সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিশেষ করে টপ আর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরাই বেশি ভাবাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।

সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান সিরিজের প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে যে ব্যর্থতার প্রদর্শনী দেখালেন লিটন-সাইফ-শামীমরা, সেটি খুবই বিস্ময়কর ও ভাবনার বিষয়। ভালো খেলতে খেলতে হঠাৎ করে ব্যাটিংয়ে ছন্দপতন হচ্ছে। খুবই বাজেভাবে শট খেলে আউট হচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা। উইকেটে সেট হলেও লম্বা ইনিংস খেলে তারা আস্থা অর্জন করতে পারছেন না। ডট বলও বেশি হচ্ছে। আবার অনেকের মধ্যে সম্ভাবনা দেখা গেলেও তারা ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। যেমনÑ টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপের মাধ্যমে জাতীয় দলে জায়গা পাকাপোক্ত করেন সাইফ হাসান। কিন্তু এই ওপেনারের ব্যাট হাতে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারেননি।

আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমও বড় রান করতে পারছেন না। টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় পাওয়ার প্লেতে দ্রুত উইকেট হারিয়ে ভুগছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, ব্যাটিংয়ের মেরুদ- মিডল অর্ডারও ভরসা দিতে পারছে না। শামীম পাটোয়ারীকে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা থাকলেও দিনে দিনে হতাশ করছেন তিনি। অন্যরাও নিষ্প্রভ ভূমিকায়। তবে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। বিশেষ করে তানজিম হাসান সাকিব, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদরা প্রয়োজনের সময় দ্রুত রান বাড়িয়ে নিতে পারেন কিংবা ব্যাটিংয়ে হাল ধরতে পারেন। সব ভাবনা শুধু টপ অর্ডার আর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ঘিরেই।

বিশ^কাপের আর মাত্র তিন মাসের কিছু সময় বাকি আছে। এর মধ্যে ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারলে বিশ^কাপেও হতাশায় পুড়তে হবে। বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার মনে করেন, আগে বাংলাদেশ যে দুটি সিরিজ হেরেছে, সেখানে টপ অর্ডার আর মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার কারণেই। পাওয়ার প্লেতে দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দল। আর সেই চাপ সামলাতে না পারলেই ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায়। বাশার বলেন, ‘ব্যাটিং লাইনআপের ওপরের দিকে ধারাবাহিক ব্যর্থ খেলোয়াড়দের সুযোগ পেতে থাকা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তাই এই জায়গায় উন্নতি না এলে বিশ^কাপ প্রস্তুতিই ধাক্কা খাবে।’ টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে ভালো করতে হলে ব্যাটিং বিভাগকেই গুরুদায়িত্ব নিতে হবে। বাংলাদেশের আরেক সাবেক অধিনায়ক আশরাফুলও বলছেন, টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডারে ভালো জুটি গড়তে হবে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের সবারই বিশেষ করে মিডল অর্ডার ও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের বেশি ধৈর্য্য নিয়ে, দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করতে হবে। নয়তো এমন পরিস্থিতি বারবারই আসবে সামনে। আমরা তখন ম্যাচও হারব। তবে আমার বিশ^াস, বাংলাদেশ ভালোভাবে ফিরবে।’