মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ছুটি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৫, ০২:১০ এএম

নীরবে ক্ষয়ে যায় ইতিহাস

ছুটি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৫, ০২:১০ এএম

নীরবে ক্ষয়ে যায় ইতিহাস

বাংলাদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পুরোনো জমিদারবাড়িগুলো একেকটি জীবন্ত ইতিহাস। কিছু কিছু ভবন আজও দাঁড়িয়ে আছে তাদের অতীত গৌরব বুকে নিয়ে। তেমনই একটি স্থাপনা পাবনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে আব্দুল হামিদ সড়কের পাশে অবস্থিত তাড়াশ জমিদারবাড়ি।

লোকমুখে শোনা যায়, পাবনার ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন রায় বাহাদুর বনমালী রায়। তিনি ছিলেন রাজা বনওয়ারী লাল রায়ের দত্তক পুত্র। তাদের মূল জমিদারি আবাসস্থল ছিল তৎকালীন বৃহত্তর পাবনা ও বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলায়। তবে জমিদারি তদারকির সুবিধার্থে ১৮০০ শতকের দিকে পাবনা শহরের মূল কেন্দ্রে আব্দুল হামিদ সড়কের পশ্চিম পাশে দেড় একর জায়গার ওপর আজকের এ তাড়াশ ভবন নির্মাণ করেন বনমালী রায়। ১৯৪২ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাজা বনমালী রায়ের বংশধরেরা এ ভবনে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাড়াশ ভবনের ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাজপরিবারের উত্তরসূরিরা এ ভবনে বসবাস শুরু করেন। এরপর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও ভবনটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। ১৯৯৮ সালে এটি প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত পুরাকীর্তি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে এর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়।

এই ভবনের স্থাপত্যে প্রাচীন গ্রিক ধারার ছাপ স্পষ্ট। সড়কের পাশ থেকেই চোখে পড়বে ভবনটির অর্ধবৃত্তাকার প্রধান ফটক। চারটি স্তম্ভের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা ফটকটি এখনো নজরকাড়া। এই ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে নানা রঙের ফুলগাছ আর বাগান। এরপর একটু এগোতেই নজরে আসবে চারটি রোমান স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা পূর্বমুখী দ্বিতল ভবন। অপরূপ কারুকাজ সমৃদ্ধ এ জমিদার বাড়িতে নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় ১০টি করে মোট ২০টি কক্ষ আছে। পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের জন্য ভবনের মোট ৮০টি দরজা ও ৫৩টি জানালা আছে। নিচতলা থেকে ওপর তলায় ওঠার জন্য ভবনের উত্তর দিকে একটি কাঠের সিঁড়ি আছে। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে হাতের ডানেই রাজার কাচারি রুম। এখানেই রাজা বিভিন্ন দরবার করতেন। দক্ষিণ-পূর্ব পাশেই রাজা বনমালী রায়ের শোবার ঘর। এ ছাড়া আশপাশে আছে বারান্দা ও রান্নাঘর থেকে শুরু করে অন্যান্য ঘর। এসব ঘর একদমই ফাঁকা পড়ে আছে । দেখা মেলেনি রাজা বা তার পরিবারের কোনো স্মৃতি বিজড়িত জিনিস। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর নামকাওয়াস্তে ছাড়া আর কেউই নেয়নি তাড়াশ ভবনের সংস্কারের উদ্যোগ। ফলে জরাজীর্ণতার ধূসরতা খেয়ে ফেলেছে ভবনটির যৌবন।

কোনো ঘরের জানালাই অক্ষত নেই। কাচ ও অন্য উপকরণ ভেঙে গেছে। রাজার শোবার ঘরের দেওয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। খুলে পড়তে শুরু করেছে ছাদ ও দেওয়ালের পলেস্তরা। দীর্ঘ বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পড়ে পানি। সংস্কার বলতে কিছুটা সীমানা প্রাচীর করা হয়েছে আর করা হয়েছে সামান্য রংচঙ। ৮ জন আনসার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলেও ভবনের রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোনো বড় পরিকল্পনা। দু’একজন মালি বাগান পরিচর্যা করেন। অথচ ভবনটিকে ঘিরে স্থানীয় মানুষের প্রত্যাশা রয়েছে অনেক। 

তাড়াশ জমিদারবাড়ি পাবনার ইতিহাসের অংশ। এই ভবনকে ঘিরে তৈরি হতে পারে একটি স্থায়ী জাদুঘর বা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। শিক্ষার্থী, পর্যটক ও গবেষকদের জন্য হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সংরক্ষণের সদিচ্ছা ও পরিকল্পিত উদ্যোগ। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, ভবনটিও ক্ষয়ে যাচ্ছে। অথচ সামান্য যতœ আর সম্মানের স্পর্শে ভবনটি ফিরিয়ে পেতে পারে তার হারানো জৌলুস। সেই প্রত্যাশার জায়গা থেকেই তাড়াশ জমিদারবাড়ি হয়তো একদিন আবার নতুনভাবে দাঁড়াবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!