বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে অনন্য। এই দেশে আছে সবুজ বন-বনানী, নদী-পাহাড়, তেমনি রয়েছে বিশাল সমুদ্রসীমা। সেই সমুদ্রের কাছে গিয়ে ভ্রমণপিয়াসুরা আবিষ্কার করেন জীবনের আলাদা এক রং। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এমনই এক স্থান, যেখানে শহরের কোলাহল ছাপিয়ে নীল সাগরের টানে প্রতিদিন ছুটে যান হাজারো মানুষ। চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। কর্ণফুলী নদী আর বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলে এই সৈকতকে ঘিরে চলছে নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা।
প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতে সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত, যে সময়েই আসা হোক না কেন, নীল আকাশ ও সাগরের ঢেউয়ের মিতালি মন ভরিয়ে দেয়। বিশেষ করে বিকেলের সূর্যাস্তের মুহূর্তটা পর্যটকদের জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। সৈকতের পরিবেশকে ভিন্ন মাত্রা দেয় সারি সারি জাহাজ। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা এই জাহাজগুলো অনেকের কাছেই আলাদা দৃশ্যপটের মতো মনে হয়। এখানে রয়েছে স্পিডবোটে করে সমুদ্রে ভ্রমণের সুযোগ, ঘোড়ায় চড়ার আনন্দ কিংবা সী-বাইকে করে তীরবর্তী এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা। সৈকতের পাশে রয়েছে বার্মিজ মার্কেট, যেখানে পাওয়া যায় নানান ধরনের পণ্য। আর এখানে খাবারের তালিকায় রয়েছে হরেক রকম স্ট্রিট ফুড, পেঁয়াজু, কাঁকড়া ভাজা, সামুদ্রিক মাছের নানা পদসহ আরও অনেক কিছু।
যেভাবে যাবেন
পতেঙ্গায় যেতে হলে প্রথমে পৌঁছাতে হবে চট্টগ্রামে। ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন অসংখ্য এসি-নন এসি বাস ছেড়ে যায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে উঠতে পারবেন। চাইলে বিমানে করেও স্বল্প সময়ে পৌঁছে যাওয়া যায় বন্দরনগরীতে। চট্টগ্রাম শহর থেকে পতেঙ্গা যেতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। গাড়ি, সিএনজি বা লোকাল বাসে করে সহজেই পৌঁছানো যায়। নিউমার্কেট, রেলস্টেশন রোড, বহদ্দারহাট, জিইসি মোড়, চকবাজার- এসব জায়গা থেকে সী-বিচগামী বাস পাওয়া যায়। অনেক সময় বাস সরাসরি সৈকতে না গিয়ে কাঠগড় বা ফ্রিপোর্ট পর্যন্ত যায়, সেক্ষেত্রে ইজিবাইকে করে সহজেই বাকি পথ পাড়ি দেওয়া যায়।
একদিনের ভ্রমণ
আরেকটি মজার বিষয় হলো, চাইলে এক দিনের মধ্যেই ঢাকার ব্যস্তজীবন থেকে বেরিয়ে এসে পতেঙ্গা ঘুরে আবার ফিরে যাওয়া সম্ভব। এজন্য রাতের বাস বা ট্রেনে করে চট্টগ্রামে পৌঁছে সকালে প্রথমেই চলে যেতে পারেন সৈকতে। দুপুর নাগাদ ঘুরে এসে শহরে খাওয়া-দাওয়া সেরে বিকেল বা রাতে ট্রেনে কিংবা বাসে করে ঢাকায় ফিরে আসা যায়। এতে এক দিনেই সমুদ্রের স্বাদ নেওয়া সম্ভব হয়।
কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান
পতেঙ্গা সৈকতের কাছেই রয়েছে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি, চট্টগ্রাম বন্দরের কয়েকটি জেটি এবং প্রজাপতি পার্ক। ফলে ভ্রমণকারীরা চাইলে একসঙ্গে একাধিক জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন।
যেখানে খাবেন
পতেঙ্গা সৈকতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণগুলোর একটি হলো এখানকার খাবার। সী-বিচেই পাওয়া যায় ভাজাপোড়া, কাঁকড়া ভাজা কিংবা সামুদ্রিক মাছের নানা পদ। ফুড কোর্টগুলোতে ফাস্টফুডের ব্যবস্থাও রয়েছে। আর যদি চান চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার, তবে শহরে চলে যেতে পারেন। ‘মেজবান হাইলে আইয়্যুন’ রেস্তোরাঁয় খেতে পারবেন বিখ্যাত মেজবানি খাবার। এছাড়া হোটেল জামানসহ শহরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে মেলে ভিন্ন স্বাদের রান্না।
যেখানে থাকবেন
পতেঙ্গায় থাকার জায়গা খুব বেশি নেই। সৈকতের কাছেই বাটারফ্লাই পার্ক রিসোর্টে থাকতে চাইলে খরচ পড়বে চার থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে। তুলনামূলক কম খরচে থাকার জন্য ঈঊচত এলাকায় পাওয়া যায় মাঝারি মানের হোটেল। তবে বেশিরভাগ পর্যটকই চট্টগ্রাম শহরে ফিরে যান। সেখানে রয়েছে বাজেট হোটেল থেকে শুরু করে মানসম্মত রিসোর্ট।