উত্তরাঞ্চলের জেলা বগুড়ার সবজির খুচরা বাজারে ৩০ টাকার এক কেজি আলু ৮০ টাকায় বিক্রির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। অবৈধ মজুত, সিন্ডিকেট এবং মুনাফালোভীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বগুড়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) হোসনা আফরোজা।
জেলা শহরসহ প্রতিটি বাজারে সবজির দাম বৃদ্ধি হওয়ায় বিপাকে আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। চাকরিজীবী ও মধ্যবিত্তরা অস্বস্তি প্রকাশ করে বাজার মনিটরিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, বাজার অস্থিতিশীল করার নেপথ্যে রয়েছে মুনাফালোভী মজুতদার ও সিন্ডিকেট। এ অবস্থায় মনিটরিং জোরদার করতে হবে। সরকারিভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রয়ের উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন।
বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভাকক্ষে গত সোমবার বাজার পরিস্থিতি ও নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং ক্যাব বগুড়ার এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। ৩০ টাকার আলু কিভাবে খুচরা বাজারে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বগুড়ায় অবৈধ মজুত করতে দিবেন না। মজুতের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে যারা বাজার অস্থিতিশীল করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
ডিসি বলেন, বাজার অস্থিতিশীল করার জন্য দায়ী অধিক মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও হাতবদলের সাপ্লাই চেইন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি বাজারের বিকল্প আরেকটি মুক্ত বাজার খোলার বিষয়েও কথা বলেন। এছাড়া হিমাগারগুলোতে যারা পণ্য মজুত রাখছে তার ডাটাবেজ মনিটরিং জোরদারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান।
জেলা প্রশাসক বলেন, যার টাকা আছে সেই এখন পণ্য মজুতের চিন্তা করে। সেই তালিকায় রয়েছে অনেক সরকারি বেসরকারি চাকুরিজীবীরা। তারা অধিক মুনাফার লোভে আলু থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্য মজুত করে রাখে। তাদের বিষয়ে তদারকি শুরুর নির্দেশনা দিয়েছেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেজবাউল করিমের সঞ্চালনায় আয়োজিত সভায় বিস্ময় প্রকাশ করেন খোদ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, বগুড়ার একজন শাড়ি ব্যবসায়ী কীভাবে বিনা লাইসেন্সে তেলের ডিলারশিপ নিয়ে ব্যবসা করছেন। ব্যবসা করলে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। কে কি ধরনের ব্যবসায় যুক্ত আছেন, সে বিষয়ে সরকারের কাছেও তথ্য থাকবে। স্বল্প জনবল থাকার কারণে নিজেরা সব জায়গায় যেতে না পারলেও জনমত গঠনে ক্যাবের নেতৃবৃন্দসহ সমাজের সকল সচেতন ব্যক্তিদের সহযোগিতা চান ভোক্তার সহকারী পরিচালক।
বাজার পরিস্থিতি ও নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক মতবিনিময় সভায় শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা আক্ষেপের সাথে ঊর্ধ্বমুখী বাজারে তাদের ব্যয়বৃদ্ধির কথা তুলে ধরেন। অন্যদিকে দ্রুততম সময়ে মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. রাসেল, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবুল হোসেন খান, ক্যাব বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া, কলোনি বাজার কমিটির সভাপতি নাহিদ ইসলাম প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :