ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর পরিচালিত সাম্প্রতিক ইরানের হামলার মধ্যেই হুথি নেতা, ‘হুথি বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ’ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল করিম আহমেদ হুসেন আল-ঘামারিকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাণো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম।
শনিবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় চালানো এই হামলায় হুথি নেতাকে হত্যার হুমকি নিয়ে হুথি বাহিনী ও আন্তর্জাতিক মহলে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
মোহাম্মদ আল-ঘামারি হুথি মিলিশিয়ার চিফ অফ স্টাফ এবং অন্যতম প্রভাবশালী সামরিক কমান্ডার হিসেবে পরিচিত। তাকে হুথিদের ‘ডি ফ্যাক্টো’ সেনাপ্রধান এবং আন্দোলনের সর্বোচ্চ নেতা আব্দুলমালিক আল-হাউথির ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২০১৬ সাল থেকে তিনি হুথি বাহিনীর চিফ অফ স্টাফের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার সামরিক দক্ষতা এবং আদর্শিক আনুগত্য তাকে সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।
জানা গেছে, তিনি লেবাননে হিজবুল্লাহ ও ইরানি বিপ্লবী গার্ডদের কাছ থেকে সামরিক ও আদর্শিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
তাকে হত্যা করার খবর এই প্রথম নয়, এর আগে বিভিন্ন সময়ে আল-ঘামারির মৃত্যুর খবর ছড়িয়েছে। তবে প্রতিবারই তিনি জীবিত অবস্থায় সামনে এসেছেন। তবে এবারের হামলায় তার মৃত্যুর খবর এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, এই হামলায় তিনি আহত হয়েছেন না-কি নিহত হয়েছেন এ নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
আল-ঘামারি ২০০৪-২০১০ সালের ছয়টি যুদ্ধসহ হুথিদের বেশিরভাগ বড় সামরিক অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৮ সালে তিনি ইয়েমেনি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন, পরে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে মুক্তি পান। তিনি রাজধানী সানা ও হুদাইদা গভর্নরেটে হুথিদের নিরাপত্তা ও ফিল্ড কমান্ডার হিসেবে কাজ করেছেন।
২০১৪ সালের হুথি অভ্যুত্থানে তার নেতৃত্বমূলক ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। মা’রিব গভর্নরেটসহ বিভিন্ন কৌশলগত এলাকায় হুথিদের সামরিক অভিযান তদারকি করেছেন তিনি। এই শহরটি তেল ও গ্যাসে সমৃদ্ধ হওয়ায় হুথিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট হলেও তারা সেখানে সফল হতে পারেনি।
২০১৬ সালে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট কর্তৃক ঘোষিত মোস্ট ওয়ান্টেড হুথিদের তালিকায় আল-ঘামারির অবস্থান ছিল ১৬তম। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ১ কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০২১ সালে জাতিসংঘ তাকে সন্ত্রাসবাদের দায়ে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হুথি বাহিনী এবং ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও হুমকি ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আল-ঘামারির ওপর হামলা একটি বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা শুধু হুথিদের নয় বরং তেহরানকেও উদ্দেশ করে দেওয়া হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :