শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আবদুল আহাদ, সিলেট

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ০১:০২ পিএম

রোগীদের ২ লিফটের ১টি সচল

আবদুল আহাদ, সিলেট

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ০১:০২ পিএম

রোগীদের ২ লিফটের ১টি সচল

ফাইল ছবি

রফিক উদ্দিন। বয়স ষাটের কাছাকাছি। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে এসেছেন সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে। হাসপাতালে ঢুকতেই লিফটে ওঠা নিয়ে পড়েন বিড়ম্বনায়। মেডিসিন বিভাগে ডাক্তার দেখাতে হলে যেতে হবে ওসমানী হাসপাতালের নতুন বিল্ডিংয়ের পঞ্চম তলায়। সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য নির্ধারিত দুটি লিফটের মধ্যে একটি অচল হয়ে বন্ধ। 

ফলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও চালু থাকা একটি লিফটে উঠতে পারেননি। এ লিফট সব সময় ট্রলি নিয়েই ব্যস্ত থাকে। তাই বাধ্য হয়ে অন্যের সহযোগিতায় সিঁড়ি বেয়ে ছেলেকে নিয়ে চার তলায় ডাক্তার দেখাতে যান রফিক উদ্দিন। তার মতো অনেকেই প্রতিদিন এমন ভোগান্তিতে পড়ছেন হাসপাতালে এসে।

ওসমানী হাসপাতালের নতুন বিল্ডিংয়ের চারটি লিফটের মধ্যে দুটি ডাক্তারদের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত করে দেওয়া রয়েছে। বাকি দুটি লিফটের মধ্যে একটি চালু থাকলেও অন্যটি গত পাঁচ-ছয় দিন ধরে বন্ধ। লিফটটি প্রতি মাসেই একাধিকবার বিকল হয়ে বন্ধ থাকে।

এ বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (এডমিন) ডা. বদরুল বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য লিফটটি বন্ধ। লিফট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে মেরামত করার জন্য জানানো হয়েছে। 

শিগগিরই তা মেরামত করে চালু করা হবে। ডাক্তারদের সেইফলি চলাচলের জন্য আলাদা লিফট স্থাপন করা হয়েছে। রোগী-স্বজনদের বেশি চাপ থাকায় এ দুটি লিফট ঘন ঘন নষ্ট হয়ে যায়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রফিক উদ্দিন বলেন, অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসে নিজেই অসুস্থ বোধ করছি। ওসমানী হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা পেতে পদে পদে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। 

টিকিট নিতে ভোগান্তি, হাসপাতালের বিল্ডিংয়ে উঠা-নামায় লিফট নিয়ে ভোগান্তি, নার্স-স্টাফদের অবহেলা, ডাক্তারদের অমনোযোগী চিকিৎসাসেবা, ডাক্তারদের গৎবাঁধা ওষুধ আর টেস্ট লিখে দেওয়ার প্রবণতা রোগীদের আরও অসুস্থ করে তোলে। এতে রোগীর স্বজনদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। 

তিনি আরও বলেন, ওসমানী হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিতে এসে দীর্ঘসময় লাইনে থেকে যখন টিকিট কাটতে বুথে গেলাম তখন কর্মরত ব্যক্তি জানালেন, জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া রোগী দেখানো যাবে না, সেই নিয়ম নাকি কয়েক মাস থেকে চলছে। তবে এমন কোনো প্রচার কোথাও দেখি নাই। 

নিয়মিত পত্রিকা ও টেলিভিশনের খবর দেখি, কিন্তু ওসমানী হাসপাতালের এ ধরনের কোনো নোটিশ চোখে পড়ে নাই। এ বিষয়ে জানা না থাকার কারণে প্রতিদিন শত শত রোগী বিড়ম্বনায় পড়ছেন।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ থেকে বাবাকে নিয়ে ওসমানী হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিতে আসা তাহমিনা আক্তার বলেন, উপজেলা হাসপাতাল থেকে বাবাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। বাবার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তাকে তাড়াতাড়ি চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হবে। 

না হয় মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসক। কিন্তু এখানে ভর্তি হওয়ার পর নতুন বিল্ডিংয়ের ৬ তলায় ৩৫নং ওয়ার্ডে যেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও চালু থাকা একটি লিফটে উঠতে পারছি না। 

আর এই বিল্ডিংয়ে ট্রলি দিয়ে রোগীকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠার কোনো সুযোগ নাই। বড়ই বিপদে আছি। এসব সমস্যা কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত। লিফট নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মেরামত করা জরুরি। 

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে রোগীদের পাওয়ার কথা বিশেষ সার্ভিস। কিন্তু আমাদের হাসপাতালগুলোতে উল্টো ডাক্তারদের দেওয়া হয় বিশেষ সার্ভিস। হাজার হাজার রোগীর জন্য লিফট একটি, অন্যটি বন্ধ রাখা হয়েছে। 

আর গুটিকয়েকজন ডাক্তারের জন্য দুটি লিফট বরাদ্দ। কর্তৃপক্ষের এমন আচরণ কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। রোগীদের চিকিৎসার স্বার্থে গুরুত্বসহকারে এসব সমস্য সমাধানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আসা করছি।

সিলেট মহানগরীর নয়াসড়ক এলাকার বাসিন্দা জয়নাল উদ্দিন বলেন, সিলেট ওসমানী হাসপাতালের সেবাপ্রত্যাশীদের বিড়ম্বনার শেষ নাই। হাসপাতালের প্রতিটি লিফট অধিকাংশ সময় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। 

আজ যেটি চালু দেখবেন, আগামীকাল দেখবেন তা বন্ধ। এর মধ্যে ডাক্তার-স্টাফদের জন্য নির্ধারিত লিফট ব্যবহার নিয়ে রয়েছে কর্তৃপক্ষের নোটিশ। যদি কেউ ভুল করে বা জরুরি প্রয়োজনে ডাক্তার-স্টাফদের জন্য নির্ধারিত লিফটে উঠে পড়েন তাহালে তাকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।

রোগীর স্বজন জাহানারা বেগম বলেন, এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে গত ১৫ দিন ধরে মা ভর্তি আছেন। হাঁটাচলা করতে পারেন না। তার রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, ইজিসিসহ বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটে নিয়ে যেতে হয়। 

কিন্তু নতুন বিল্ডিংযের লিফট নষ্ট থাকায় মহাবিপদে আছি। মাকে কোলে করে নিতে পারছি না; এদিকে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও লিফটে ব্যবহার করতে পারছি না। এতে মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর স্বজনরা বলেন, সিলেট ওসমানী হাসপাতালের সেবার মান বাড়ানো উচিত। রোগীদের জন্য সবসময় লিফট চালু রাখা, ডাক্তার-স্টাফ ও নার্সদের ব্যবহার ভালো হওয়া উচিত। 

তাদের মনে রাখা উচিত মানুষ এখানে কেউ বেড়াতে আসে না, সেবা নিতে আসে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষ যাতে সর্বোচ্চ সেবা পায়। প্রতারক চক্র, দাললদের দৌরাত্ম্য দূর করে সেবার মান বাড়াতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে মনে করছেন ওসমানী হাসপাতালের সেবাপ্রত্যাশীরা।

 

 

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!