বগুড়ার আদমদিঘীতে চোর আখ্যা দিয়ে মতিউর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তিনি গত দেড় বছর ধরে সৌদি আরবে লোক পাঠানোর বৈধ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ গ্রহণ না করায় পরিবার চরম হতাশায় ভুগছে।
রোববার (১৮ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার নশরৎপুর স্টেশনে বগুড়া থেকে সান্তাহার অভিমুখী একটি কমিউটার ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী মতিউর রহমানের ছেলে আহসান হাবিব বলেন, ‘আমার বাবা সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে ৩-৪ জন লোককে এরই মধ্যে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। সর্বশেষ ১৫ দিন আগে বগুড়ার তালশন গ্রামের মোহাম্মদ হেলালের ছেলে সজিব হোসেনকে সৌদি আরবে পাঠান।’
‘এ জন্য সজিবের কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু সৌদিতে গিয়ে বৈধ কাগজপত্র পেতে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সজিব তার বাবাকে পাঠিয়ে হুমকি দেন।’
আহসান হাবিব বলেন, ‘সজিবের ছোট ভাই রাকিব এবং শ্যালকরা আমার বাবাকে ট্রেনে মোবাইল চোর অপবাদ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমার বাবা তখন ৪-৫ মিনিট ট্রেনের সঙ্গে ঝুলতে থাকেন। তারা অমানবিক মনে আমার বাবার ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। এ সময় তারা বাবার কাছে থাকা ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত ৫০ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয়।’
এদিকে, মতিউর রহমান ঝুলন্ত অবস্থায় নশরৎপুর স্টেশনে পৌঁছালে অনেকেই তাকে চোর ও ছিনতাইকারী বলে দাবি করেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মতিউরের পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে মতিউরের ছেলে বলেন, ‘এভাবে ঝুলে থাকতে থাকতে পরবর্তীতে নশরৎপুর স্টেশনে পৌঁছালে ট্রেনের ধাক্কা খেয়ে আমার বাবা নিচে পড়ে যান। তখন সেখানকার উৎসুক জনতাও বাবাকে ছিনতাইকারী ভেবে বেধড়ক মারধর করেন। পরে আমরা কোনোরকমে উদ্ধার করে আদমদিঘী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি তাকে।’
এ ঘটনার পর থেকে তারা মানুষের সামনে যেতে পারছেন না বলে পরিবারটির অভিযোগ।
আহসান হাবিব বলেন, ‘এ ঘটনার পর থেকে আমরা মানুষের সামনে যেতে পারছি না। আমার বাবা তো চোর বা ছিনতাইকারী না। তিনি বৈধ পথে ব্যবসা করে আসছিলেন। আমরা এ ঘটনার দ্রুত বিচার চাই।’
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি বলে দাবি করেন আহসান।
তিনি বলেন, ‘আদমদিঘী থানায় গেলে তারা বলেন- এটি রেলওয়ের বিষয়। পরে সান্তাহার রেলওয়ে থানায় গেলে সেখানকার পুলিশ জানায়, আমার বাবা মারা গেলে মামলা হতো, এখন নয়।’
আহসান হাবিব কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাবা বৈধভাবে কাজ করতেন। তিনি কোনো ছিনতাইকারী না। অথচ তাকে অপমান করা হলো, মারধর করা হলো, পুলিশও আমাদের কথা শুনছে না। এখন আমরা কোথায় যাব?’