লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে এক মানসিকভাবে অসুস্থ ভবঘুরে ব্যক্তিকে গণপিটুনির পর গাছে বেঁধে রাখে স্থানীয়রা। এরপর ওই ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। ঘটনাটি একদিকে যেমন মানবিক বেদনার, তেমনি ওই ব্যক্তির জীবনে এনে দেয় নতুন মোড়। দেড় যুগ ধরে নিখোঁজ থাকা মানুষটিকে অবশেষে চিনে ফেলেন তার স্বজনরা। দীর্ঘদিন পর তিনি ফিরে যান আপন গৃহে। স্বজনদের সঙ্গে এই আনন্দের মুহূর্তে অংশ নেয় রামগঞ্জ থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) স্বজনরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানায় এসে তাকে নিয়ে যান।
জানা গেছে, ভবঘুরে ওই ব্যক্তির নাম বাচ্চু মিয়া (৪৮)। তিনি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা।
এর আগে বুধবার (২১ মে) রামগঞ্জ পৌর শহরের শ্রীপুর বাজারে ছেলেধরা সন্দেহ বাচ্চুকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে একটি গাছে বেঁধে রাখে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে রামগঞ্জ থানা এসআই আবদুল করিম তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।
রামগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী গোলাম মর্তুজা মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনা দিন একটি শিশুকে রাস্তার পাশ থেকে কোলে নিয়ে বাচ্চু নামে লোকটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে স্থানীয়রা তাকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। একপর্যায়ে তাকে রাস্তার পাশে গাছে বেঁধে রাখা হয়। ঘটনাটির ছবি দিয়ে ফেসবুকে লেখালেখিও হয়।’
বাচ্চুর স্বজনদের বরাত দিয়ে থানা পুলিশ জানায়, বাচ্চু মানসিকভাবে অসুস্থ। প্রায় দেড় যুগ আগে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ ছিলেন। এরপর কোথাও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে পরিবার তাকে খুঁজে পাওয়া নিয়ে হাল ছেড়ে দেয়। পরিবারের ধারণা ছিল বাচ্চুকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। গত বুধবার রাতে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির পর তাকে গাছে বেঁধে রাখার ছবি ফেসবুকে দেখে স্বজনরা। হারিয়ে যাওয়া বাচ্চুকে ফিরিয়ে নিতে কয়েকশ মাইল অতিক্রম করে রামগঞ্জে ছুটে আসেন তারা৷
বাচ্চুকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে রামগঞ্জ থানা পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। এতে স্বজনরা থানার ওসি আবুল বাশারকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রামগঞ্জ থানার ওসি আবুল বাশার বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে বাচ্চুর স্বজনরা তার অবস্থান জানতে পেরেছেন। বাড়িতে তার স্ত্রী, মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। দেড় যুগ ধরে তিনি বাড়ির বাইরে। অবশেষে বাচ্চু বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। এটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে।’
আপনার মতামত লিখুন :