‘তুফান ও অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে আমার ঘর ভেঙে গেছে। এখন থাকার জায়গা নাই। আমরা এখন অসহায়। কই (কোথায়) যাইয়ুম (যাব), কই থাইয়ুম (থাকব) সব নিয়ে গেছে মেঘনার জোয়ারে। ভাত রান্নার জায়গা নাই (নেই)। গেল তিনদিন ভাত খাইনি। বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। তাই অতি জোয়ারের পানি ঘরে ঢুকেছে।’
কথাগুলো রূপালী বাংলাদেশকে বলেছেন—লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার নবীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা মো. শফিক। তার বাড়ি নবীগঞ্জ বাজারের পাশে মেঘনা নদীর পাড়ে।
মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ ধীর গতিতে চলছে। কাজ রেখে ঠিকাদার পালিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। এ জন্য অমাবস্যা ও সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘনা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়েছে।
এতে নদীর মাঝামাঝি ও আশপাশের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। চলাচলের সড়ক ভেঙে গেছে। মেঘনার পানিতে ভাসছে গবাদিপশু। পানি উঠেছে বেশ কয়েকটি গ্রামে।
শফিক ছাড়াও মেঘনারপাড়ে কথা হয়েছে ইব্রাহিম খলিল ও ফয়সালসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, মেঘনা নদী রক্ষায় ৩ হাজার ১ শ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তীর রক্ষা বাঁধের টেন্ডারের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো বাঁধ দেখা যাচ্ছে না।
এ জন্য সাগরে যেকোনো নিম্নচাপের প্রভাবে চর লরেঞ্চ, চর মার্টিন, চর কালকিনি ও সাহেবের হাট ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে মানুষে ঘরবাড়ি, গরু-মহিষ নদীতে ভেসে যায়। ভেঙে যায় রাস্তাঘাট। দ্রুত সময়ে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি তাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৩১ কিলোমিটার কাজকে ৯৭টা প্যাকেজ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯২টার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ব্লক বসানো কাজ ৪৫-৫০ শতাংশ হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য আমাদের কাছে নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘনা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়েছে। এতে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগিদ দিয়ে দ্রুত সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্ট চলছে।’
আপনার মতামত লিখুন :