রংপুরের সরেয়ারতল এলাকায় যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত রেজোয়ানার পরিবারের দাবি, অভিযুক্ত স্বামী ও তার আত্মীয়রা পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
তবে ওই ঘটনায় আদালতে মামলা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন থানার ওসি। মরদেহ নিয়ে থানায় উপস্থিত হয়েও ১২ ঘণ্টা ধরে মামলা না নিয়ে গড়িমসি করছে পুলিশ এমন অভিযোগ করেছে পরিবার।
জানা যায়, গত ৮ জুন দুপুরে গৃহবধূ রেজোয়ানার গায়ে আগুন দেওয়া হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোরে মারা যান। রাত ১২টার দিকে মরদেহ নিয়ে থানায় আসেন নিহতের পরিবার। শনিবার দুপুর পর্যন্ত থানায় অপেক্ষা করেন তারা।
নিহতের বাবা রেজাউল করিম জানান, ঈদের দিন রাতে মেয়ের বাড়িতে কোরবানির মাংস নিয়ে যান তিনি। পরদিন দুপুরে তিনি খাওয়া-দাওয়া করে রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এ সময় তার মেয়ে, জামাই ও তার মা খেতে বসেন। তিনি শুনতে পান তার মেয়ে বলছিলেন, ‘আমার খেতে বসেও শান্তি নাই। তিনি ঘর থেকে বের হয়ে দেখেন তার মেয়ে-জামাই সেখানে নেই। একটু পর ঘরের ভেতর থেকে তার মেয়ে চিৎকার করে ‘আমাকে বাঁচাও’। এ সময় তিনি ঘরের দরজা খোলার চেষ্টা করলে দেখেন ভেতর থেকে লক করা। পরে বেলকনিতে গিয়ে দেখেন তার মেয়ের শরীরে আগুন জ্বলছে।
তিনি আরও বলেন, তার মেয়ে নিজেকে বাঁচাতে সেখানে ঘুরছেন। পরে স্থানীয়রা সেখানে এসে বেলকনির বাইরে থেকে পানি ঢেলে আগুন নিভিয়ে ফেলে। পরে তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান। ঢাকা মেডিকেলে ৪ দিন ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার ভোরে তার মেয়ে মারা যান।
ভুক্তভোগী রেজোয়ানার মামা মনির হোসেন বলেন, অ্যাম্বুলেন্সযোগে মরদেহ নিয়ে আসার সময় ফোন করে পুলিশ তাদের নগরীর মাহীগঞ্জ থানায় ডাকেন। এ সময় হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তার জামাই আব্দুল করিম, তার বোন পারভীন ও দুলাভাই ফখরুল তাদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন। রাত ১২টার দিকে মরদেহ নিয়ে থানায় আসার পর অভিযুক্ত তিনজনকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। কিন্তু আধাঘণ্টা পর পুলিশ পারভীন ও তার স্বামী ফখরুলকে ছেড়ে দেয়। পরে তারা থানার গেট থেকে তাদের আটক করে আবারও পুলিশের কাছে দেন। এ ঘটনায় মামলার এজাহার দেওয়া হলেও পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। তারা পরিবারের লোকজন ১২ ঘণ্টা থেকে মামলা দিতে থানায় অবস্থান করছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে মাহিগঞ্জ থানার ওসি মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘এজাহারে কিছু ভুল থাকায় মামলা নিতে বিলম্ব হচ্ছে।’
তবে গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক মন্তব্য করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এ সময় থানায় উপস্থিত সহকারী পুলিশ কমিশনার (মাহিগঞ্জ জোন) মারুফ আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। আটক ৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
ওসির বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্ত করে এ রকম কোনো ঘটনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :