ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
উন্নয়নমূলক কাজের বিপরীতে নির্ধারিত ১% হারে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে খোদ রাণীশংকৈল উপজেলা প্রকৌশলী আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে।
উন্নয়নমূলক কাজের নিম্নমান নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত করা হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না; উল্টো ঠিকাদারদের পক্ষেই সাফাই গেয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণকাজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্টিমেটে রাস্তা নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। কাজের অংশ হিসেবে রয়েছে বক্স কাটিং, রোলার কমপ্যাক্ট, বালু ফিলিং, ইটের এজিং, খোয়া, রোলার ফিনিশিং, প্রাইম কোট, ভাঙা পাথর, ডাইস, মিক্সিং, প্ল্যান্ট মেশিন, পাথরের হিটিং, বিটুমিনের হিটিং এবং বিটুমিন প্রয়োগ। তবে স্টিমেট অনুযায়ী এসব কাজ ঠিকভাবে হচ্ছে না।
রাস্তার বক্স কাটিংয়ের পরে সঠিকভাবে রোলার ব্যবহার করা হয় না। বালু ফিলিংয়ের কাজে মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এজিংয়ে ‘এ’ গ্রেড ইটের সঙ্গে নিম্নমানের ইট মেশানো হচ্ছে। খোয়ার সঙ্গেও নিম্নমানের ইটের খোয়া মেশানো হচ্ছে। ডব্লিউবিএম (WBM) শেষে ফিনিশিং করতে ইটের গুড়া ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রাইম কোটে বিটুমিনের পরিমাণ কম দেওয়া হচ্ছে। ভাঙা পাথরের সঙ্গে কমদামি বাংলা রাউন্ড পাথর মেশানো হচ্ছে। পাথরের ডাইস কম মেশানো হচ্ছে। প্ল্যান্ট মেশিনে পাখার মাধ্যমে ডাইস উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিটুমিনের তাপমাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি করা হচ্ছে, যাতে বিটুমিন সাশ্রয় হয়।
সড়ক নির্মাণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিটুমিন স্টিমেটে যে পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে, তার অর্ধেক ব্যবহার করা হচ্ছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের এসব অনিয়ম দেখেও না দেখার ভান করেন প্রকৌশলী ও সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার, কারণ তারা লক্ষ লক্ষ টাকার পিসি পেয়ে থাকেন।
এভাবেই পিসির জোরে সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণ করছে ঠিকাদাররা। কাজের যথাযথভাবে তদারকি থাকার কথা থাকলেও পিসির জোরে স্থানীয়দের চোখে ধুলা দিয়ে চলছে নির্মাণকাজ।
বিল পাস হয়ে গেলেই যেন দায়মুক্তি। নির্মাণাধীন সড়ক বছর পার হতেই না হতেই পাথর উঠে গর্ত তৈরি হয়, ফলে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে সড়ক। সরকারি বরাদ্দের এমন অপব্যয়ের কারণে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, ‘পিসি দিতে হয়, না দিলে পুঁজি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর পিসি দিলে কোনো ঝামেলা হয় না, সহজেই কাজের বিল তোলা যায়।’
রাণীশংকৈল উপজেলা প্রকৌশলী আনিসুর রহমানের কাছে পিসি নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন।
আপনার মতামত লিখুন :