রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান তাবিউর রহমান প্রধানের নিয়োগে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগের তদন্তে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
হাইকোর্টের রুল ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চিঠির প্রেক্ষিতে শনিবার (২৮ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৩তম সিন্ডিকেট সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম শাহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি গঠন করা হয়।
বিষয়টি রোববার (২৯ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশিদ নিশ্চিত করেছেন।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শামসুল আলম সরকার এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশিদ।
জানা গেছে, ২০১২ সালে নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সুপারিশপত্রে জালিয়াতি করে প্রভাষক পদে নিয়োগ পান তাবিউর রহমান। এরপর থেকেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষক ফোরাম ‘হলুদ দল’-এর ছত্রছায়ায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরি ধরে রেখেছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভায় সরকারের পদত্যাগ চাওয়ার প্রস্তাবে তিনি তীব্র বিরোধিতা করেন।
সূত্র জানায়, তাবিউর রহমান আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে একাধিকবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) এবং লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এর আগে গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকৃত সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী মো. মাহামুদুল হককে বঞ্চিত করে তাবিউর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশে কাটা-ছেঁড়া করে কলম দিয়ে তাবিউরের নাম বসানো হয়।
নিয়োগবঞ্চিত মো. মাহামুদুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জালিয়াতির মাধ্যমে তাবিউরকে চাকরি দিয়েছে। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টে তার চাকরি অবৈধ বলা হয়েছে। তাহলে তাকে বরখাস্ত করা হচ্ছে না কেন? তিনি কি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় নাকি বিশ্ববিদ্যালয় তার ভয়ে চুপ?’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন ব্যক্তি কীভাবে ১৩ বছর ধরে অবৈধভাবে শিক্ষকতা করেন, সেটাই বড় প্রশ্ন। এর দায় নিতে হবে বিগত সকল উপাচার্যকে। যেহেতু এটি জ্যেষ্ঠতা সম্পর্কিত মামলা, তাই তাকে বিভাগীয় প্রধান থেকেও সরাতে হবে।’
এ বিষয়ে গঠিত নতুন তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আগেও একটি তদন্ত কমিটি ছিল। তবে কিছু সিন্ডিকেট সদস্য পরিবর্তন হওয়ায় নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইউজিসি থেকে বিষয়টি জানানোয় আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্তসাপেক্ষে দ্রুতই সত্যতা বেরিয়ে আসবে।’
উল্লেখ্য, ২০২3 সালের জুন মাসে গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সরকার পতনের ঘটনার প্রেক্ষিতে কমিটির কার্যক্রম আর এগোয়নি।
সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, ‘কমিটি গঠনের পর আমি চট্টগ্রামে থাকায় রংপুরে এসে সাক্ষাৎকার ও তথ্য যাচাই করা কঠিন ছিল। আমি ভিসিকে অনুরোধ করেছিলাম অভ্যন্তরীণভাবে তদন্ত করাতে। এরপর কমিটি পুনর্গঠনের কথা থাকলেও তা হয়নি। পরে ভিসিও পরিবর্তন হয়ে যান।’
আপনার মতামত লিখুন :