চায়ের দোকানে বাবার সঙ্গে কাজ করা সেই ছেলেটিই আজ দেশের গর্ব। জীবনের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বেলায়েত হোসেন এবার ৪১তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দর্শন বিষয়ে সারা দেশে দ্বিতীয় হয়েছেন। তার এই অর্জন প্রমাণ করে, আত্মপ্রত্যয় আর পরিশ্রম থাকলে কোনো স্বপ্নই দূরের নয়।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর বাছারকান্দি গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম বেলায়েতের। বাবা শামছুল তালুকদার ও মা হালিমা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে তিনি একমাত্র ছেলে। অভাব-অনটনের সংসারে শৈশব-কৈশোর কেটেছে সংগ্রামে। বাবার সঙ্গে গ্রামের চায়ের দোকানে কাজ করতেন, আবার চালিয়ে যেতেন পড়ালেখাও।
শিক্ষাজীবনের শুরু গ্রাম্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে পড়াশোনা করেন শরীয়তপুর সরকারি কলেজে। স্বপ্নের পেছনে ছুটে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে। সেখান থেকে স্নাতক ও ২০১৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
বেলায়েত জানান, আমি একজন কৃষকের সন্তান। আমার বাবা-মা নিজেরা অভাবী ছিলেন, কিন্তু আমার ভবিষ্যতের জন্য কখনও কৃপণতা করেননি। তাঁরা অনেক কষ্ট করেছেন, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমি তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি, এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
সরকারি চাকরির প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বেলায়েত ২০২২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় শরীয়তপুর সদর উপজেলায় প্রথম হন এবং জানুয়ারিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন। এরপর ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট প্রকাশিত ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দর্শন বিভাগে দ্বিতীয় হয়ে তিনি প্রশংসা কুড়ান।
বাবা শামছুল তালুকদার বলেন, আমরা দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছি। ছেলের সাফল্যে মনে হচ্ছে আমাদের সব কষ্ট সার্থক হয়েছে। সে শুধু আমার নয়, পুরো গ্রামের গর্ব।
মা হালিমা বেগম বলেন, ছেলের জন্য অনেক কষ্ট করেছি, অনেক রাত্রি নির্ঘুম কাটিয়েছি। আজ সে শিক্ষক হয়েছে, মানুষ গড়ার কারিগর। আমরা গর্বিত।
বেলায়েত বলেন, এখন আমার স্বপ্ন-পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো, গরিব মেধাবীদের জন্য কিছু করা। আমার সাফল্য যদি কাউকে অনুপ্রাণিত করে, তাহলেই নিজেকে সার্থক মনে করব।”
আপনার মতামত লিখুন :