রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম

শিক্ষককে গুলি করে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন এসপি জায়েদুল

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম

শিক্ষক আব্দুল কাদের ও  সাবেক এসপি মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

শিক্ষক আব্দুল কাদের ও সাবেক এসপি মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগের ঘরোয়া যত দাপটে পুলিশ সুপার ছিলেন এর মধ্যে অন্যতম মুন্সীগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। ২৬ মার্চ, ১৫ আগস্ট কিংবা বিজয় দিবসে অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মতো দিতেন বক্তব্য তিনি।

সন্ত্রাসী নির্মূলে মুন্সীগঞ্জে একের পর এক ক্রসফায়ার, তৎকালীন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা ও নির্যাতন, সরকারি হরগঙ্গা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে ছাত্রলীগ সভাপতির কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপে ছিলেন আলোচিত, তেমনি তৎকালীন সরকার বিরোধীদের দমন-পীড়নেও নানা সময় উঠেছে সমালোচনা।

এবার সাবেক এই পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে তৎপরতা ও রাতে কেন্দ্রের দরজা না খোলায় সরকারি হরগঙ্গা কলেজের এক শিক্ষককে গুলি করার মতো ভয়াবহ কথা ভাবার বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে।

সরকারি হরগঙ্গা কলেজের শিক্ষক আব্দুল কাদেরর সঙ্গে ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছে প্রতিষ্ঠানের আরেক শিক্ষক মুন্সী সিরাজুল হক। সে পোস্টেই নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা মন্তব্যে জানিয়েছেন আব্দুল কাদের। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সী সিরাজুল হক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘১৮ সালে রাতের ভোটে যথাযথভাবে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার সহকর্মী আব্দুল কাদের সোহাগের কী অবস্থা করেছিল পুলিশ, প্রশাসন ও পতিত সরকারের দোসরেরা সেটা খুব কাছে থেকে দেখেছি। আব্দুল কাদেরের পক্ষ হয়ে মুন্সীগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।

পুলিশ সুপারের সেই ভয়াবহ কথাটা আজো কানে বাজে। সে বলেছিল, অন্য কেউ হলে ওকে গুলি করতে নির্দেশ দিতাম, কিন্তু হরগঙ্গা কলেজের শিক্ষক হওয়াতে শুধু শারীরিক নির্যাতনের ওপর দিয়ে গেছে। সেদিনের সেই মিটিং-এ আরও অনেক ভয়াবহ কথা শুনতে হয়েছিল।

আব্দুল কাদের সেদিন ন্যায়বিচার তো পায়নি, বরং তার চাকরি চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে গিয়ে।’

এদিকে এই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে ভুক্তভোগী সরকারি হরগঙ্গা কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল কাদের লিখেন, ‘বিগত স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ২০১৮-এর রাতের যে অবৈধ নির্বাচন হয়েছিল, সে অবৈধ নির্বাচনে সরকারি আদেশে আমাকে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দিয়ে মিরকাদিম পৌরসভা মুন্সিগঞ্জে পাঠানো হয়েছিল। রাতের বেলা ভোটকেন্দ্রের গেটের তালা খুলতে অস্বীকৃতি ও অবৈধভাবে ভোট প্রদানে অস্বীকৃতি জানাই। রাতভর তৎকালীন সহকারী রিটার্নিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার, এডিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা সুপার পুলিশ, অত্র এলাকার মেয়র, থানার ওসি, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে লোক মাধ্যমে এবং আমার ফোন রাতভর হুমকি প্রদান করে। তাতেও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করিনি।’

‘নির্বাচনের দিন ৩০/১২/২০১৮ তারিখ সারাদিন আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করলেও নেক্কারজনক ঘটনা ঘটে বিকেল ৫টার পরে। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও অফিস যা কিনা তখন সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ছিল, সেখানে যখন নির্বাচনী জিনিসপত্র বুঝিয়ে দিয়ে বের হতে থাকি, তখন প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ১২ থেকে ১৫ জন আমার ওপর হামলা করে। তাদের এই হামলা ছিল আমাকে মেরে ফেলার হামলা। আমার মাথা, পেট ও স্পর্শকাতর স্থানে অমানবিকভাবে কিল-ঘুষা ও লাথি মারতে থাকে। যখন জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা হয় তখন তারা আমার তিনটি মোবাইল, সঙ্গে থাকা ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায় আর বলতে থাকে স্যার বলেছে শেষ করে ফেলতে। তারা চলে গেলে কয়েকজন ধরাধরি করে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের রুমে নিয়ে যায়। তখন তাকে বলি আপনি এবং আপনারা আমাকে পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছেন। তিনি অন্য দিকে তাকিয়ে বলেন, ওকে হাসপাতালে নিয়ে যান।’

‘আমাকে হাসপাতালে আনা হলেও এখানেও তাদের লোক ছিল। কানের কাছে এসে বলতেছিল এখানে কাউকে কিছু বললে আমার অনেক সমস্যা হবে। এর মধ্যে আমার কয়েকজন সহকর্মী এসে পড়ে। ডাক্তার আমাকে পেইন কিলার দিয়ে বলে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে, মাথায় ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়েছে কি না তা চেক করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ওই রাতেই আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং চিকিৎসা নেয়।’

যখন একটু সুস্থ হয়ে আসি তখন আমার সহকর্মী সিরাজুল হক মনির স্যার এবং নাজির আহমেদ স্যারকে সঙ্গে নিয়ে তৎকালীন মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের সঙ্গে দেখা করতে যাই।

‘সেদিনকার ঘটনা ব্যাখ্যা করা অমানবিক’

নির্বাচনের দিন আমার সঙ্গে যে কনস্টেবল দেওয়া হয়েছিল সেই কনস্টেবল নাকি আমাকে গুলি করে মেরেই ফেলতে চেয়েছিল? আমি বলেছিলাম আমার তিনটা মোবাইল ফোন যেন ফেরত দেওয়া হয়। সে রেগে গিয়ে বলেছিল, আমার কত বড় স্পর্ধা আবার মোবাইল ফেরত চাই। আমি বেঁচে আছি তা-ই বেশি। আমার নামে ফাইল খোলা হবে এবং আমার চাকরি নিয়েও পরবর্তীতে ঝামেলা হতে পারে এই হুমকিও প্রদান করেন।’

‘আজ অনেকদিন পরে স্যার আবার ওইসব দুঃখময় স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। আমি জীবনে সাহস করে ফেসবুকে এসব কথাগুলো লিখব কখনো ভাবতে পারিনি।’

এদিকে পোস্টটি ঘিরে স্থানীয় ছাত্রমহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এই সাবেক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

তবে ৫ আগস্টের পর এক সময়ের দাপটে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেনি। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!