দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী)। এবার এ আসনে পাল্টে যেতে শুরু করেছে রাজনীতির দৃশ্যপট। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ আসনে রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও জাতীয় দলসহ বিরোধী জোটের শরিকরা।
নতুন করে দলীয় কার্যালয়গুলো খুলেছে, নেতাকর্মীরা নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন মিছিল-মিটিং, উঠান বৈঠক ও পথসভায়। বহুদিন ভোটের বাইরে থাকা সাধারণ মানুষ আশায় বুক বেঁধেছ, ফিরে পাবেন গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার।
২০০৮ সাল পর্যন্ত বাজিতপুর-নিকলী ছিল বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু এরপর ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ শুরু করে মামলা, হামলা ও নির্যাতনের এক ধারাবাহিক চক্র। বহু নেতাকর্মী এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন, কেউ কেউ রাজনীতি থেকেই সরে দাঁড়ান।
তবে গত বছরের ৫ আগস্টের ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান’-পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাজনীতির গতিপথ বদলেছে। মাঠে ফিরছেন পুরোনো নেতাকর্মীরা, সংগঠনগুলো পুনর্গঠিত হচ্ছে, বাড়ছে তৎপরতা।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও জেলা সহসভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল বলেন, ‘আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী নই, আমি মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী। দল এখনো আমার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি।’
অন্যদিকে, বাজিতপুর পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র এহসান কুফিয়া বলেন, ‘১৭ বছর দমন-নিপীড়নের মধ্যেও দলের সঙ্গে থেকেছি। দল নিশ্চয়ই তা মূল্যায়ন করবে।’
নির্বাচনি সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ১২ দলীয় জোট। জোটের সমন্বয়ক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত চিঠির ভিত্তিতে মাঠে সক্রিয় হয়েছেন। বিএনপির স্থানীয় নেতারাও তাকে সহযোগিতা করছেন।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম ‘জাতীয় ঐকমত্য’ গঠনের আহ্বান জানিয়ে এই আসনে নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তিনি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ছাড়া প্রয়াত এমপি মজিবুর রহমান মঞ্জুর পুত্র মোস্তাফিজুর রহমান মামুন, প্রবীণ নেতা মীর মো. জলিল, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা শফিকুল আলম রাজন এবং জেলা বিএনপির সদস্য মো. বদরুল আলম শিপু সক্রিয় রয়েছেন।
নিকলীতে প্রয়াত তিনবারের এমপি আমির উদ্দিন আহমেদের পুত্র ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুল মোমেন মিঠুও ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন। বাজিতপুরে সাবেক সচিব আব্দুল ওয়াহাব বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।
জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি দুই উপজেলাতেই নিয়মিত গণসংযোগ করছেন এবং মাঠের তৎপরতায় এগিয়ে আছেন বলে জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক হটস্পট
আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের দখলদারিত্বের পর কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি-জামায়াত ও শরিকদের পুনরায় উত্থানকে রাজনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার জনগণের আকাঙ্ক্ষা, দীর্ঘ দমন-পীড়নের ইতিহাস এবং বিরোধী দলগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আসনটি এখন পরিণত হয়েছে একটি ‘নির্বাচনী হটস্পটে’।
আপনার মতামত লিখুন :