বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানুজ্জামান হাসান, কালীগঞ্জ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০২:০৬ পিএম

ভয়ংকর রূপে তিস্তা, পানিবন্দি ১৫ হাজার পরিবার

হাসানুজ্জামান হাসান, কালীগঞ্জ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০২:০৬ পিএম

তিস্তার বাম তীরের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।       ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

তিস্তার বাম তীরের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তৃতীয় দফায় লালমনিরহাট জেলার তিস্তার বাম তীরের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল থেকে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বুধবার দুপুরে বিপদ সীমার ৭ সে: মি: উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল সপ্তাহে বিপদসীমা অতিক্রম করে নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। একদিন পানি কমলেও গত মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) দুপুর ১২টায় তা আবার বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে পানি আরও বেড়ে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।ফলে তিস্তা নদীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীপাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাট জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের আবাদকৃত ফসলের ক্ষেতে পানি উঠেছে। নিম্নাঞ্চলের পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। যার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ইতোমধ্যেই চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী উপজেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গীমারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, মোগলহাট, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

পানি প্রবাহ যত বাড়বে বন্যার শ্বঙ্কা ততই বাড়বে। এতে তিস্তার বাম তীরের লালমনিরহাটে তৃতীয় দফায় বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।  পানির চাপের কারনে বেশ কিছু রাস্তা ও বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

বিশেষ করে কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন ভোটমারীতে ইন্ট্রাকো সোলার প্যানেল এলাকা ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এ স্থানে তিস্তা নদীর মুলস্রোত ধারা বন্ধ করে সোলার প্যানেল স্থাপন করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করতে রাস্তাগুলোতে চাপ পড়েছে। এটি ভেঙে গেলে নদী চলে আসবে কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে।

হাতীবান্ধার হলদিবাড়ি চরের আব্দুল মতিন বলেন, নদীতে পানি বাড়লেই চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বর্ষাকালে বন্যা নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। রাত থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। ক্রমেই বাড়ছে পানি। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। পরিবার-পরিজন নিয়ে মাচাংয়ের ওপর বসে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে নদীপাড়ের মানুষদের। এসব এলাকার বাসিন্দারা শিশু-বৃদ্ধ আর গবাদি পশুপাখি নিয়ে চরম বিপদে রয়েছেন।

আদিতমারীর চর গোবর্দ্ধন এলাকার আজিজুল ইসলাম জানান, রাত থেকে পানি বাড়ছে তিস্তায়। নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত রাস্তাঘাট ও পুকুর। চরাঞ্চলে হেঁটে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের আটো চালক সেলিম ইসলাম বলেন, নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। পরিবারগুলো পানিবন্দি, রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। পশুপাখি, শিশু, বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে মানুষ। আমাদের বাড়িতেও পানি ঢুকছে, কিন্তু কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। তাই প্রশাসনের দ্রুত সহযোগিতা কামনা করছি।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেই আমার ইউনিয়নের ৯ ওয়াডের দেড় হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

হাতীবান্ধা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উত্তম কুমার নন্দী বলেন, সকাল থেকে পানির উচ্চতা হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করছি।

হাতীবান্ধার ইউএনও শামীম মিঞা জানান, আমরা সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুত নেওয়া হয়েছে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!