ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, একাধিক মন্ত্রী, এমপি ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন জুলাইযোদ্ধা সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ।
অভিযোগে ১৬৭ জনের নাম উল্লেখ কওে চলতি বছর ১৭ জুন চট্টগ্রামের খুলশী থানায় এই মামলা করেন তিনি। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, গত বছর (২০২৪) ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর ওয়াসা মোড়ে সশস্ত্র ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের গুলিবর্ষণে আহত হন তিনি। একই অভিযোগে এর আগে ঢাকার একটি আদালতে আরও একটি মামলা করেন নিজেকে মানবাধিকারকর্মী পরিচয় দেওয়া এম এ হাশেম রাজু নামে এক ব্যক্তি।
দুই মামলায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে ঢালাওভাবে আসামি করা হয় ব্যবসায়ি এবং সাংবাদিকদের। একই ভুক্তভোগী ব্যক্তি এবং একই ঘটনা নিয়ে দেশের দুই প্রান্তে দুটি মামলা হওয়ায় দেশ জুড়ে ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ ও এম এ হাশেম রাজু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে অভিযোগ ওঠে অনৈতিক সুবিধা নিতে এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যূত্থানকে বিতর্কিত করতে এই মামলা করেন জুলাইয়ের সম্মুখ সারির এই যোদ্ধা। ১৭ জুন নগরীর খুলশী থানায় সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদের করা হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ।
তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ জানায়, বাদী সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদেও মোবাইল কল লোকেশন ও অবস্থান যাচাই করে অভিযোগের সত্যতা পায়নি পুলিশ।
গত ১০ জুলাই আদালতে দেওয়া পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করেন, ‘গত ৫ আগস্ট (এজাহারে উল্লেখিত সময়) বাদী সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ নগরীর ওয়াসা মোড়ের ঘটনাস্থলেই ছিলেন না, সে সময়ে তিনি ছিলেন নগরীর পাঁচইলাইশ ও কোতোয়ালী থানা এলাকায়।’ সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদের মোবাইল ট্রাকিং করে কোন বাসায় এবং কোন এলাকায় ছিলেন তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করে পুলিশ।
সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন, ‘আন্দোলনের এ চরম অবস্থায় তা দমাতে ব্যর্থ ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের গদি বাঁচাতে সেদিন সন্ধ্যা থেকে কারফিউ ঘোষণা করলেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক ০৫/০৮/২০২৪ তারিখ স্বৈরাচারী সরকারের দেয়া কারফিউ ভঙ্গের জন্য বুকে এবং পায়ে ব্যথা নিয়ে আমি চট্টগ্রামের বাদুরতলা থেকে মিছিল শুরু করি।
প্রথমে একটি রিকসা করে ঐ মিছিল বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ২নং গেইট, জিইসি মোড় হয়তো দুপুর ২.০০ ঘটিকায় খুলশী থানাধীন ওয়াসা মোড় সংলগ্ন রাস্তার পশ্চিমে-উত্তরে পৌঁছালে একদল মারমুখী সশস্ত্র ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারেরা হত্যা করার উদ্দেশ্যে আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে ছড়রা গুলি আমার মাথায়, পায়ে, মুখে ও চোখে লেগে আমি সেখানেই রাস্তায় বেহুশ হয়ে পড়ে যাই। রাতে হুশ ফেরার পর আমি জানতে পারি যে আমি চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে।’
তবে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, এজাহারে বর্ণিত সময়ে ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর ওয়াসা মোড়ে এজাহারে উল্লেখিত কোনো ঘটনা ঘটেনি। সেদিন ১ দফার দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল কর্মসূচি ছিল ঢাকায় হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম নগরীতে সহিংস বিক্ষোভ ও পুলিশের গুলিবর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তবে খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ওইদিন শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পর নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য আনন্দমিছিল বের হয়। সে সময় সিএমপি কার্যালয়ের সামনে একটি দল গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে এবং সিএমপি কমিশনার কার্যালয়ের বাইরের জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় কমিশনার কার্যালয়ের সামনে প্রথমে সাউন্ড গ্রেনেড, পরে টিয়ারগ্যাস ছোড়ে পুলিশ। এই ঘটনা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পরিদর্শক সরদার মিজানুর রহমান বাদি হয়ে গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর খুলশী থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। মামলা নম্বর ০৬।
সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ করা মামলায় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মামলার এজাহারে বাদীর (ভিকটিম) বর্ণনা মতে দুপুর ২টায় খুলশী থানাধীন ওয়াসা মোড় সংলগ্ন রাস্তায়-পশ্চিম-উত্তরে আসামীদের ছোড়রা গুলির আঘাতে ডান চোখে গুলি বিদ্ধ হন সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ। আঘাত লাগে মাথা, পা এবং মুখে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বাদীর মোবাইল নম্বরের অবস্থান নির্ণয় করে দেখা যায় বাদীর অবস্থান মামলার ঘটনার তারিখ ও সময়ে মামলার ঘটনাস্থলে ছিলো না। ঠিক ঐ সময়ে বাদীর (ভিকটিম) অবস্থান ছিল পাঁচলাইশ এবং কোতোয়ালী থানা এলাকায়।
প্রতিবেদনে পুলিশ আরও উল্লেখ করেন, প্রতক্ষ্যদর্শী সাক্ষীদের প্রদত্ত সাক্ষ্য প্রমাণে প্রকাশ পায়, মামলার ঘটনাস্থল গত ৫ আগস্ট দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পযন্ত এজাহারে উল্লেখিত কোনো ঘটনা ঘটেনি। কোনো ধরনের গুলাগুলির ঘটনাও হয়নি।
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য এজাহারে উল্লেখিত সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদের মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে শনিবার (২৩ আগস্ট) সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে পরে রাতে তিনি একই নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি যদি ওয়াসার মোড়ে সংগঠতি ঘটনায় আহত না হই তাহলে আমি কোথায় আর কি ভাবে আহত হরাম সে বিষয়টি পুলিশকে খুঁজে বের করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে আমি আহত হয়েছি। তাহলে আমি কোথায় আহত হয়েছি সেটি খুঁজে বের করার কাজ পুলিশের। যোগ করেন তিনি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন