দীর্ঘ ৪১ বছরের শিক্ষকতা জীবনের ইতি টেনে সহকারী শিক্ষক হাফেজ মাওলানা কাজী মো. আবুল কালামকে দেওয়া হলো এক অনন্য ও আবেগঘন রাজকীয় বিদায়। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বখতিয়ারপাড়া চারপীর আউলিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার এই প্রিয় শিক্ষককে ঘোড়ার গাড়িতে করে বিদায় জানায় শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও স্থানীয় মানুষজন।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আয়োজিত এ স্মরণীয় অনুষ্ঠানে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং এলাকার শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় কেউ তার পা ছুঁয়ে সালাম করছেন, কেউ জড়িয়ে ধরে অশ্রুসিক্ত হচ্ছেন, আবার কেউবা হাতভরা ফুল নিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছেন- পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতার আবেগঘন পরিবেশ।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে তুলে দেওয়া হয় শিক্ষক আবুল কালামকে। চারপাশ থেকে শিক্ষার্থীরা গাড়িটি ঘিরে ধরে এগিয়ে দিতে থাকেন তাকে। যেন বিদায় নয়, এটি ছিল প্রিয় শিক্ষকের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ।
দীর্ঘ ৪১ বছরের আলোকিত পথচলা
কাজী মো. আবুল কালাম ১৯৮৪ সালে চারপীর আউলিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় যোগ দেন। নিজের বাড়ি থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বের এ প্রতিষ্ঠানেই তিনি কাটিয়ে দেন জীবনের চার দশকের বেশি সময়।
শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, ‘এই মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী আমার প্রাণ। এখানে আমি শুধু চাকরি করিনি; বরং জীবন গড়েছি, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মানুষ করার চেষ্টা করেছি। আজ যে ভালোবাসা ও সম্মান পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অসংখ্য স্মৃতি জমেছে এই দীর্ঘ পথচলায়। আমার শিক্ষার্থীদের অনেকেই আজ দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। তাদের সাফল্যই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’
মাদ্রাসায় দিনভর বিদায় আয়োজন
বিদায় উপলক্ষে দিনভর আয়োজন করা হয় খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল ও শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠান। সকাল থেকে মাদ্রাসার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও বিদায় সংবর্ধনা। সভাপতিত্ব করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাজী মো. আবদুল হান্নান।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষক কাজী মো. আবুল কালাম আমাদের প্রতিষ্ঠানের আলোকবর্তিকা ছিলেন। শুধু পাঠদানে নয়, নৈতিক ও মানবিক শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অনন্য। তাঁর অবদান আমরা কোনোভাবেই ভুলতে পারি না।’
বিদায় অনুষ্ঠানের পর শিক্ষকের জন্য আলাদা গাড়িতে উপহারসামগ্রী পাঠানো হয়, আর ঘোড়ার গাড়িতে করে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয় নিজ বাড়িতে।
চার দশকের বেশি সময় ধরে একটানা এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করে হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন গড়েছেন কাজী মো. আবুল কালাম। তার এই বিদায় জানিয়ে যেন একটি যুগের অবসান ঘটল। তবে ছাত্র, শিক্ষক ও এলাকাবাসীর ভালোবাসায় তিনি চিরদিন বেঁচে থাকবেন তাদের হৃদয়ে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন