প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ, কালো টাকা সাদা করা, ভুয়া পরিচয় ব্যবহার এবং প্রকৃত সাংবাদিকদের হুমকির অভিযোগে আলোচনায় উঠে এসেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কথিত সাংবাদিক মাসুদ রানা।
সাবেক বিমা কর্মী এই ব্যক্তি সাংবাদিকতার পরিচয়ে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হলেও পুলিশের নীরব ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় সাংবাদিকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাণীশংকৈল উপজেলার লেহাম্বা ইউনিয়নের ওমরাডাঙ্গী পদমপুর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা দীর্ঘদিন শহরের মিনি স্টেডিয়াম সংলগ্ন একটি বাসায় ভাড়া থাকলেও ১৩ মাসের ভাড়া পরিশোধ না করেই গা ঢাকা দেন।
এর আগে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কর্মরত অবস্থায় যাত্রীছাউনি হাজী মার্কেট এলাকায় একটি অফিস পরিচালনা করতেন তিনি। মার্কেট মালিকের অভিযোগ, সেখানেও তিনি কয়েক মাসের ভাড়া বাকি রেখে যান।
এ ছাড়াও বহু গ্রাহকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২০০৫ সালে হুন্ডির অর্থসহ পুলিশের হাতে আটক হন মাসুদ রানা। সে সময় তার নামে মামলা হয় এবং তিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকেন। পরে ২০২০-২২ সালের দিকে পুনরায় রাণীশংকৈলে আত্মপ্রকাশ করে নিজেকে ওষুধ ব্যবসায়ী ও পরে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, তিনি প্রতারণার মাধ্যমে প্রভাবশালী পরিচয় তৈরি করেন এবং নিজেকে কোটিপতি হিসেবে তুলে ধরতে থাকেন।
সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাসুদ রানা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পৌর এলাকায় একাধিক বাড়ি, দোকান ও জমি রয়েছে, যার মোট মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।
একটি সূত্র দাবি করেছে, তার ছেলে মশিউর রহমান অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সি, মানি লন্ডারিং ও ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ধারণা করা হচ্ছে, তার মাধ্যমেই পরিবারটি অল্প সময়ে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে।
সাম্প্রতিক অভিযোগে জানা গেছে, মাসুদ রানা ২ লাখ টাকার বিনিময়ে এশিয়ান টেলিভিশনের একটি ভুয়া আইডি কার্ড সংগ্রহ করে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। এ ছাড়া রাজনৈতিক সুবিধা নিতে তিনি কৃষক দলে যোগ দিয়ে সহসভাপতির পদও ‘কেনেন’। তবে পরবর্তীতে অনিয়ম ও অপকর্মের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত হন।
কৃষক দলের সভাপতি মোশারফ হোসেন এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি অডিও ক্লিপে মাসুদ রানা রাণীশংকৈল প্রেসক্লাব ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। সেখানে তিনি প্রেসক্লাব সভাপতি আশরাফুল আলমকে বাইকের পেছনে বেঁধে শহর ঘোরানোর হুমকি দেন। এ ছাড়াও স্থানীয় সাংবাদিকদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও পা ভেঙে দেওয়ার হুমকিও শোনা যায় ওই অডিওতে।
এ ঘটনায় রাণীশংকৈলের অন্তত চার জন সাংবাদিক থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পুলিশি পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এ নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক মহলে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ, মাসুদ রানা ভুয়া সাংবাদিকতার পরিচয় ব্যবহার করে প্রকৃত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এতে জেলায় সাংবাদিক সমাজে তীব্র উত্তেজনা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন