দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার শাইখুল হাদিস, প্রধান মুফতি ও সদরুল মুহতামিম প্রবীণ আলেম মুফতি হাফেজ আহমদুল্লাহ মারা গেছেন।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার দিকে চট্টগ্রামের একটি হাসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
মুফতি হাফেজ আহমদুল্লাহর ইন্তেকালে জামিয়া পটিয়াসহ সারাদেশের আলেম-উলামার মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রোববার রাত ৯টায় পটিয়া পৌর সদরের জামিয়ার মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সারাদেশ থেকে তার ছাত্র-ভক্ত-অনুরাগীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেবেন বলে মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে ।
মুফতি হাফেজ আহমদুল্লাহ ১৯৪১ সালের ১২ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার নাইখাইন গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম মুহাম্মদ ইসা। তার নানা মুজাহিদে মিল্লাত মাওলানা শাহ আহমদ হাসান (রহ.) ছিলেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠিতা।
তিনি ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় শৈশবকালেই নিজ পরিবার থেকে ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। ৭ বছর বয়সে পিতার কাছে কুরআন শরীফের নাজেরা শেষ করেন। ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি মাদরাসায় হেফজ বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে ১০ বছর বয়সে কুরআন শরিফের হেফজ সমাপ্ত করে কিতাব বিভাগে অধ্যায়ন শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে ২১ বছর বয়সে তিনি জামিয়া হতে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন।
উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে তিনি পাকিস্তান গমন করে জামিয়া আশরাফিয়া, লাহোরে ভর্তি হন। সেখানে দাওরায়ে হাদিসের কিতাবাদি আবারও অধ্যায়ন করেন। এখানে তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন মাওলানা ইদ্রিস কান্ধলভি রাহিমাহুল্লাহ, মাওলানা রাসূল খান রাহিমাহুল্লাহ, মাওলানা ফয়েজ আলী শাহ রাহিমাহুল্লাহ, মাওলানা জামিল আহমদ থানভী রাহিমাহুল্লাহ, মাওলানা আবদুর রহমান আম্রছড়ি রাহিমাহুল্লাহ, মাওলানা উবায়দুল্লাহ আম্রছড়ি রাহিমাহুল্লাহসহ প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তি। তারপর তিনি পাকিস্তানের মুলতান শহরে চলে যান। এখানের প্রসিদ্ধ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় খাইরুল মাদারেসে ভর্তি হয়ে ওস্তাজুল মাকুলাত মাওলানা মুহাম্মদ শরীফ কাশ্মীরি রাহিমাহুল্লাহ’র তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তর পরবর্তী কিতাবাদি অধ্যায়ন শুরু করেন।
সমাপনী পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য তার শিক্ষক তাকে ‘বাঙ্গাল কা খরকে আদত’ (বাঙালি ছাত্রদের বিরল প্রতিভা) উপাধিতে ভূষিত করেন। এরপর দারুল উলুম করাচীতে মুফতি শফী উসমানীর তত্ত্বাবধানে ফতোয়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এখানে মুহাম্মদ তাকি উসমানী তার সহপাঠী ছিলেন।
১৯৬৮ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরিতে অধ্যাপনা শুরু করেন। দীর্ঘ ২৩ বছর অধ্যাপনা করার পর হাজী মুহাম্মদ ইউনুস রাহিমাহুল্লাহ’র অনুরোধে তিনি আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় যোগদান করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এখানেই ছিলেন।
তিনি তার নানা চট্টগ্রামের জিরি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা শাহ আহমদ হাসানের (রহ.) অসমাপ্ত কাজ ‘মাশায়েখে চাটগামী’ সমাপ্ত করেছেন, যা দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তার রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে ১. যুগোপযোগী দশ মাসায়েল (আরবি), অনুবাদ: হুমায়ুন খবির খালভী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ২. মাযহাব ও মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা, ৩. তাসকীনুল খাওয়াতীর (ব্যাখ্যাগ্রন্থ), ৪. মহিমান্বিত রমজান, ৫. মাসায়েলে রমজান, ৬. নাফহাতুল আহমদিয়া ফি খুতুবাতিল মিম্বারিয়া (আরবি), অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ইত্যাদি।