টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন (স্বপন ফকির)-এর বিরুদ্ধে একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গেছে, তিনি টাঙ্গাইল-২ (ভুয়াপুর-গোপালপুর) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছোট মনিরকে সংবর্ধনা প্রদান করেছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত ১৭ বছরে ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের’ এমপি ও মন্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে তিনি কোনো মামলা-মোকদ্দমার শিকার হননি। অথচ একই সময়ে ত্যাগী বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলা-হামলার শিকার হয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, স্বপন ফকির শহরজুড়ে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের নেতাদের পাশে নিজের ছবি দিয়ে ব্যানার ও ফেস্টুন লাগিয়ে আওয়ামী লীগপন্থি ভাবমূর্তি ধরে রেখেছিলেন।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে স্বপন ফকির আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মীকে নিরাপত্তা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে, যা ইতোমধ্যেই এলাকাবাসী বিএনপির হাই কমান্ডে লিখিতভাবে জানিয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, স্বপন ফকির আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছোট মনিরের পাশে বসে প্রকাশ্যে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ও পুলিশকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি গত ১৭ বছর টাঙ্গাইল-১ আসনের সাবেক এমপি, মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। এমনকি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ডামি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বলেও স্থানীয়দের দাবি।
এলাকাবাসী আরও জানান, মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফি উদ্দিন মনিরের পরিবারের দায়িত্ব নেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির সরকার। অভিযোগ রয়েছে, এই দায়িত্ব স্বপন ফকিরই দেন। ২০২৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার ভাই মজিদ সরকার অরণখোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কেন্দ্র কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। জাকির সরকার কাকরাইদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে উঠান বৈঠকও করেন, যা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আজিজ ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ও সাবেক মন্ত্রীদের প্রকাশ্যে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং তাদের সহায়তায় নিজের শিক্ষকতার পদ রক্ষা করেছেন। বর্তমানে তিনি স্বপন ফকিরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন।
পৌর বিএনপির সভাপতি খুররম খান ইউসুফজি প্রিন্স ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং তার পর থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে বিএনপির ৭৫০ জন নেতাকর্মীর নামে মামলায় সহযোগিতা করেন। এখন তিনিও স্বপন ফকিরের প্রধান সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় সূত্র জানায়, স্বপন ফকির গত বছরের ৫ আগস্টের পর এলাকায় ফিরে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। যদিও অভিযোগ রয়েছে, তিনি গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের হয়ে কাজ করেছেন।
এদিকে মধুপুর উপজেলা বিএনপি বর্তমানে চারটি গ্রুপে বিভক্ত। তিনটি গ্রুপ আলাদা আলাদা আনন্দ মিছিল করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জোবাইর আল মাহমুদ রিজভীর নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। লে. কর্নেল (অব.) আসাদুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বে ‘কর্নেল আজাদ সমর্থক গোষ্ঠী’ মিছিল করে। এ ছাড়া স্বপন ফকির গ্রুপও মিছিল করে, যেখানে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন সরকার, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনসহ পৌর বিএনপির কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এই বিভাজন তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, স্বপন ফকির জনপ্রিয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন এবং এলাকায় দলীয় বিভাজনকে আরও তীব্র করছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন