ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পূজামণ্ডপে চালের বদলে টাকা, সিন্ডিকেটের কবলে সরকারি বরাদ্দ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ০২:১০ পিএম
কটিয়াদি উপজেলার পূজামণ্ডপ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ধর্মীয় উৎসবের আনন্দ ও ভক্তির আবহে মুখর কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার পূজামণ্ডপগুলো। তবে এই আনন্দের মধ্যেই জন্ম নিয়েছে এক বিতর্ক- সরকারি বরাদ্দকৃত চাল না পেয়ে অর্ধেক দামে নগদ টাকা গ্রহণে বাধ্য হয়েছেন পূজা উদ্যোক্তারা। অভিযোগ উঠেছে, একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।

জানা গেছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর কটিয়াদি উপজেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু মণ্ডপগুলোতে সরবরাহের পরিবর্তে উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। উপজেলার ৪২টি পূজামণ্ডপ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

চাল বরাদ্দের ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) হাতে পেলেও উদ্যোক্তাদের চাল বুঝে পেতে বিলম্ব ঘটান সংশ্লিষ্ট খাদ্য কর্মকর্তারা। পরে হঠাৎ গুদামে ডেকে এনে ফাঁকা রেজিস্টারে স্বাক্ষর করিয়ে দেওয়া হয় নগদ অর্থ। এই কাজে পূজা উদযাপন কমিটির কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ।

বর্মনপাড়া পূজামণ্ডপের সভাপতি শীতল চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘বরাদ্দের ডিও নিয়ে গুদামে গেলে কর্মকর্তা বলেন, স্বাক্ষর করে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে যান। তখন উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিমাই বাবুও একই কথা বলেন। কোনো চাল দেখানো হয়নি।’

আনন্দময়ী যুব সংঘের সভাপতি উষা রঞ্জন সরকার জানান, ‘পূজার ব্যস্ততার সময় বরাদ্দ আসে। তখন চাল বুঝে নেওয়া কঠিন ছিল, তাই বাধ্য হয়ে নগদ টাকা নিই।’

ফুটন্ত কলি যুব সংঘের সভাপতি লিটন রবি দাস বলেন, ‘ইউএনও মিটিংয়ে চাল বরাদ্দের কথা জানান। পরে গুদামে গিয়ে দেখি, কিছু লোক ১৫ হাজার টাকা দিয়ে সবার ডিও কিনে নিচ্ছে। পাশের জেলায় একই পরিমাণ চাল ২২-২৫ হাজারে বিক্রি হলেও, আমরা বাধ্য হয়ে ১৫ হাজারেই দিই।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি পূজামণ্ডপে আগত ভক্তদের খাবারের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সভাপতি/সম্পাদক বরাদ্দের ডিও সংগ্রহ করেছেন। এরপর বিষয়টি খাদ্য বিভাগের আওতায়।’

চালের বদলে নগদ লেনদেনের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কনক কান্তি দেবনাথ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি পূজামণ্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চালের পরিবর্তে নগদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বছর কিশোরগঞ্জ জেলার ৩৮৪টি পূজামণ্ডপে মোট ১৯৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে কটিয়াদি উপজেলার ৪২টি মণ্ডপে বরাদ্দ ছিল সাড়ে ২১ মেট্রিক টন। কিন্তু বরাদ্দের বড় অংশ কালোবাজারে চলে যাওয়ার অভিযোগে প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও ধর্মীয় উৎসবের পবিত্রতা নিয়ে।

ধর্মীয় উৎসবের পবিত্রতা রক্ষায় এবং পূজা উদ্যোক্তাদের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করতে সিন্ডিকেট ভেঙে প্রশাসনকে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে- এটাই এখন সময়ের দাবি।