জাটকা সংরক্ষণ, মা ইলিশ রক্ষা ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ২২ দিন (৪ অক্টোবর-২৫ অক্টোবর) বলবৎ থাকবে।
এ সময় নদী ও সাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা, পরিবহন, বাজারজাত ও মজুত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া, কালাবাদর, বেতুয়া ও ইলিশা নদী।
মেঘনা নদীর চর ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এবং তেঁতুলিয়া নদীর ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তম পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগ, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে উপকূলীয় এলাকায় চলছে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রচারণা।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, ইলিশের নিরাপদ প্রজনন এবং বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতেই প্রতি বছর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ভোলার সাতটি উপজেলার নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮৬ জন হলেও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ের জন্য প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে, যার বরাদ্দ ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন।
তবে এ সময়টিতে নিষেধাজ্ঞার খবরে হতাশ ভোলার জেলেরা। তারা জানান, মৌসুমের শুরুতে নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়নি। এখন মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে যখন কিছুটা ইলিশ ধরা পড়ছে, ঠিক তখনই মাছ ধরা বন্ধের ঘোষণা এসেছে। এতে তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
-20251003151812.jpg)
ভোলা সদরের তুলাতুলি মাছঘাটের আড়ৎ মালিক নোয়াব বলেন, ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেয়ে যেমন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনি হতাশ হয়েছেন জেলেরা। তার মতে, নিষেধাজ্ঞা যদি ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হতো, তাহলে অনেকেরই উপকার হতো।
নাছির মাঝি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেলে নিজাম মাঝি, কালু ও মাইনুদ্দিন মাঝি বলেন, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন আমাদের পর্যাপ্ত সহায়তা না পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫’ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি জানান, আশ্বিনী পূর্ণিমার আগের চার দিন ও অমাবস্যার পরের তিন দিন মিলিয়ে মোট ২২ দিন এ অভিযান চলবে। এতে মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অংশ নেবে।
ফরিদা আখতার আরও জানান, এ সময় ৩৭ জেলার ১৬৫ উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার জেলে পরিবারকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন