ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে খোকন মিয়া (৪০) নামের এক রিকশাচালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল সভাপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মামলার পর দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের করমা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত খোকন মিয়া ওই গ্রামের মৃত কছুম উদ্দিনের ছেলে।
এ ঘটনায় শনিবার (৪ অক্টোবর) নিহত খোকন মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে মগটুলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নজরুল ইসলামসহ ১৫ জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, করমা গ্রামের কছিম উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন নামের দুই ভাই ছিলেন। ৬-৭ বছর আগে গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যুর পর জমি নিয়ে কছুম উদ্দিনের সঙ্গে গিয়াস উদ্দিনের ছেলেদের বিরোধ শুরু হয়। বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনায় থানায় এর মধ্যে তিনটি মামলাও হয়। স্থানীয়ভাবে দুই পরিবারের বিরোধ মেটাতে কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হলে তা মানেননি কেউ।
স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিকশা রেখে ঘর থেকে বের হন খোকন মিয়া। এ সময় গিয়াস উদ্দিনের ছেলে স্থানীয় মগটুলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নজরুল ইসলাম ও তার ভাই এবং পরিবারের সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে দুই হাত ও দুই পা ভেঙে দেন। এ সময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ও মাথায় আঘাত করা হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাত একটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
পরে পুলিশ উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক খোকনকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ব্যক্তির ছেলে বিল্লাল হোসেন গাজীপুরে পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। বাবার হত্যার খবরে শনিবার সকালে এলাকায় যান। তিনি ফোনে বলেন, ‘জমি নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে বাবাকে হত্যা করেছে নজরুল ও তার ভাইয়েরা। বাবাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, আমরা রাত দেড়টার দিকে যখন খোকন মিয়াকে উদ্ধার করি, তখনো তিনি জীবিত ছিল, কথা বলেছেন, পানি খেয়েছিলেন। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লোকটির দুই হাত ও দুই পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। মাথাতেও আঘাত ছিল।
ওসি আরও বলেন, হত্যায় ছাত্রদল নেতা নজরুল, তার ভাইয়েরা এবং ভাইয়ের স্ত্রীরা জড়িত। এ ঘটনায় এর মধ্যে জ্যোৎস্না আক্তার ও সোহাগ নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।
ঘটনার পর থেকে ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক। এ কারণে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফরহাদ আহমেদ বলেন, ‘জমি নিয়ে চলা বিরোধ আমরাও মীমাংসার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তারা কেউ মানেনি। হত্যার ঘটনা ন্যক্কারজনক। অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় থাকে না। সে আমাদের সংগঠন করলেও সে পদ রাখার যোগ্যতা আর নেই। তাকে বহিষ্কার এখন সময়ের ব্যাপার। আমরা বিষয়টি জেলাকে জানিয়েছি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন