দেশে প্রথমবারের মতো সাপে কাটা রোগীদের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে বিশেষায়িত ওয়ার্ড করা হয়েছে। রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাপে কাটায় মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে এবং দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ. এম. শামীম আহাম্মদ এই বিশেষায়িত ওয়ার্ডের উদ্বোধন করেন। হাসপাতালের পুরোনো ক্যানটিনের জায়গায় ১২ শয্যার হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) মানের এই ওয়ার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। এখানে সাপে কাটা রোগীদের শ্বাসকষ্ট, হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা ও অন্যান্য জটিলতারও চিকিৎসা হবে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওয়ার্ডে আটজন পুরুষ ও চারজন নারী রোগীর জন্য শয্যা রাখা হয়েছে। তবে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হলে ওয়ার্ডের বাইরেও সেবা দেওয়া হবে। ওয়ার্ডের ফোকাল পারসন হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু শাহীন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তিনি বর্তমানে রাসেলস ভাইপার সাপের বিষ নিয়ে পিএইচডি করছেন, যা শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২০৫ জন সাপে কাটা রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২৬০ জন বিষধর সাপের কামড়ে আক্রান্ত ছিলেন, বাকিরা নির্বিষ সাপের কামড়ে এসেছিলেন। হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে ৩০ জন মারা গেছেন—এর মধ্যে ১০ জন রাসেলস ভাইপারের কামড়ে, বাকিরা কালাচ, কেউটে ও গোখরার কামড়ে মারা যান।
মৃত্যুহার কমাতে ডেঙ্গু, করোনা ও নিপাহ ভাইরাসের মতোই সাপে কাটা রোগীদের জন্যও বিশেষায়িত ওয়ার্ড করার সিদ্ধান্ত নেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহাম্মদ। এ জন্য আগেই চিকিৎসক ও নার্সদের বাছাই করে ‘স্নেকবাইট ন্যাশনাল গাইডলাইন’ অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর এইচডিইউ মানের ওয়ার্ডটি প্রস্তুত করা হয়।
ওয়ার্ডের ফোকাল পারসন ডা. আবু শাহীন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মৃত্যুহার ছিল ২৭ শতাংশ। এখন চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির কারণে তা অনেক কমে এসেছে। নতুন বিশেষায়িত ওয়ার্ডে সমন্বিত চিকিৎসা (ইন্টিগ্রেটেড ট্রিটমেন্ট) দেওয়া যাবে। এখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্স থাকবেন, পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুত থাকবে, ফলে মৃত্যুহার আরও কমবে।’
তিনি জানান, সাপে কাটা রোগীদের প্রতিটি অ্যান্টিভেনম ডোজের মূল্য প্রায় ১৩ হাজার টাকা। এক ডোজে ১০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম লাগে, আবার অনেক রোগীর ক্ষেত্রে একাধিক ডোজও প্রয়োজন হয়। তবে রোগীরা হাসপাতাল থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এসব ওষুধ পাবেন। রোগী ওয়ার্ডে আসার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হবে—এক মিনিটও দেরি করা হবে না।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ. এম. শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘সাপে কাটা রোগীরা অনেক সময় দেরি করে হাসপাতালে আসেন। আবার আগেও দেখা যেত, বড় ওয়ার্ডের এক কোণায় তাদের চিকিৎসা হতো। এখন আলাদা ওয়ার্ড থাকায় তা হবে না। এটি একেবারেই মেডিকেল ইমার্জেন্সি ইউনিট—এইচডিইউ সুবিধাসহ ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক ও নার্সদের উপস্থিতি থাকবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন