শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম

বৃত্তি উৎসবের নামে সাতক্ষীরায় কোচিং সেন্টারের রমরমা বাণিজ্য

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম

বেসিক বৃত্তি উৎসব-২০২৫’ পরীক্ষায় দেখা যায় চরম অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা ও বেদনার চিত্র। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বেসিক বৃত্তি উৎসব-২০২৫’ পরীক্ষায় দেখা যায় চরম অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা ও বেদনার চিত্র। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বৃত্তি উৎসবের নামে সাতক্ষীরায় শিক্ষা-বাণিজ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। শহরের নামিদামি কোচিং সেন্টারগুলো ‘বৃত্তি পরীক্ষা’র আড়ালে গড়ে তুলেছে অর্থ উপার্জনের যন্ত্র। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ বা শিক্ষার মান উন্নয়ন নয়, বরং অভিভাবকদের প্রতিযোগিতার মনোভাবকে পুঁজি করেই ফুলে-ফেঁপে উঠছে এই অবৈধ ব্যবসা।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সকালে সাতক্ষীরা শহরের নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ‘বেসিক কোচিং সেন্টার’ আয়োজিত ‘বেসিক বৃত্তি উৎসব-২০২৫’ পরীক্ষায় দেখা যায়, চরম অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা ও বেদনার চিত্র। সকাল থেকেই ভিড়ে ঠাসা স্কুল প্রাঙ্গণ। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ—প্রায় তিন হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের একসাথে গাদাগাদি করে বসানো হয়েছে। পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল নেই, পানির ব্যবস্থাও ছিল না। গরম ও ভিড়ে ছোট ছোট শিশুরা কান্নায় ভেঙে পড়ে।

পরীক্ষা শেষে স্কুলের বাইরে অভিভাবকদের মধ্যে সৃষ্টি হয় হাহাকার। কেউ সন্তানকে খুঁজে পাচ্ছেন না, কেউ স্কুল গেটের বাইরে ঠাসাঠাসি ভিড়ে বাচ্চার নাম ধরে ডাকছেন।

এক মা অসহায়ের মতো কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমার মেয়েটাকে পাচ্ছিলাম না প্রায় আধাঘণ্টা। ভিড়ের মধ্যে ওর কান্না শুনে খুঁজে পেলাম। এই অব্যবস্থাপনা যদি স্কুলে হয়, তাহলে আমরা কোথায় নিরাপদ?’

অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা করে ফি নেওয়া হয়েছে, যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় তিন লাখ টাকা। অথচ সেই অর্থের কোনো জবাবদিহিতা নেই। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া এমন বাণিজ্যিক পরীক্ষার আয়োজন করেও আয়োজকরা দেদারসে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

অভিভাবক গোলাম সাকলাইন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা শিক্ষা নয়, সরাসরি বাণিজ্য। শত শত শিশু একত্রে পরীক্ষা দিচ্ছে, কোনো সুরক্ষা বা তদারকি নেই। শুধুই টাকার লেনদেন। অভিভাবকদের আবেগের ওপর নির্ভর করে এসব কোচিং সেন্টার এখন কোটি টাকার বাণিজ্যে নেমেছেন।’

আরেকজন অভিভাবক নাদিম সাকের বলেন, “আমরা নিজেরাই সন্তানদের বিপদে ঠেলে দিচ্ছি। সমাজে ‘আমার ছেলে-মেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে’ এই অহংকারের জন্য আমরা শিশুদের অযৌক্তিক প্রতিযোগিতায় পাঠাচ্ছি। কোচিংগুলো সেটাকেই পুঁজি করে টাকা কামাচ্ছে।”

সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অ্যাড. কামরুজ্জামান ভুট্টো জানান, ‘বেসিক কোচিং সেন্টার কর্তৃক বৃত্তি পরীক্ষার যে আয়োজন করেছে নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে সেখানে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ—প্রায় তিন হাজারের অধিক শিক্ষার্থীকে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে তাদেরকে গাদাগাদি বসানো হয়েছে। প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা করে প্রায় তিন লাখের অধিক টাকা নিয়েছেন আয়োজকরা। এতে সর্বোচ্চ তাদের খরচ হয়েছে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। বাকিটা সবই তাদের বাণিজ্য। আর এই বাণিজ্য করতে গিয়ে চরম হয়রানির শিকার হলেন সাধারণ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।’

শিক্ষাবিদ ও সচেতন নাগরিকরা বলছেন, শিক্ষাকে ব্যবসায় পরিণত করার এই প্রবণতা ভয়াবহ। শিশুদের মানসিক বিকাশ ও সৃজনশীলতা নষ্ট হচ্ছে।

তারা বলেন, মুখস্থ বিদ্যা নির্ভর পরীক্ষার সংস্কৃতি শিশুদের মধ্যে ভয়, উদ্বেগ আর মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। বৃত্তির নামে এই প্রতিযোগিতা বন্ধ করা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক ধরনের মানসিক অবসাদে ভুগবে।

তারা আরও বলেন, দেশের শিক্ষানীতিতে কোচিং সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি দুর্বল। শিক্ষা অফিস ও প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এই অব্যবস্থা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

সাতক্ষীরার অভিভাবক ও সচেতন মহল প্রশাসনের প্রতি এসব কোচিং সেন্টারের বাণিজ্যিক বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধ করতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে, অবৈধভাবে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে নিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা আয়োজন নিষিদ্ধের জোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি শিক্ষাকে ব্যবসায় নয় মানবিকতা, সৃজনশীলতা ও নিরাপত্তার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে এখনই। শিশুদের কান্না যেন আর কোনো পরীক্ষার প্রাঙ্গণে না শোনা যায়।

তারা আরও বলেন, সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক শিক্ষা-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও শহরের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারগুলো সেই ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বৃত্তির নামে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জনের খেলায় মেতে উঠেছে।

তবে, বেসিক কোচিং সেন্টারের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বৃত্তি উৎসবে চরম অব্যবস্থাপনার কথা অস্বীকার করে জানান, তারা নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়টি এই বৃত্তি উৎসবের জন্য দুই হাজার টাকায় আজ শুক্রবার ভাড়া নিয়েছিলেন।

[85209

নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক জানান, তার বিদ্যালয়ের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী সেখানে সর্বোচ্চ ১৫০০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারে। তাকে বলাও হয়েছিল সেই পরিমাণ শিক্ষার্থীদের সেখানে পরীক্ষা নেবেন। কিন্তু তারা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থীদের সেখানে বৃত্তি পরীক্ষা নিয়েছে কি না সে বিষযয়ে তিনি জানেন না বলে জানান। তবে তিনি বিষয়টির খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলে জানান।

তবে, ভাড়ার বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি আরও জানান, তাদের কাছ শুধুমাত্র বিদ্যুৎ খরচ বাবদ দুই হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!