যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি রোসনেফ্ট থেকে তেল আমদানি স্থগিত করেছে ভারতের শীর্ষ বেসরকারি তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (RIL)। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ভারতের শীর্ষ ধনকুবের ও বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি।
রিলায়েন্স গ্রুপের একজন মুখপাত্র ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস-কে বলেন, ‘রিলায়েন্স রাশিয়ার তেল ক্রয় সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এই বিষয়ে কোম্পানি ভারত সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।’
এর আগে গত বুধবার (২২ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি বিষয়ে রাশিয়ার ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতির অভাব’ দেখিয়ে রোসনেফ্ট ও লুকোইল- এই দুই রুশ জ্বালানি জায়ান্টের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনের নির্দেশনায় বলা হয়, রোসনেফ্ট বা লুকোইলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সব কোম্পানি ২১ নভেম্বরের মধ্যে লেনদেন স্থগিত বা বাতিল করতে হবে, অন্যথায় তারাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ গত বছরের ডিসেম্বরে রোসনেফ্টের সঙ্গে ১০ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার আওতায় বছরে প্রায় ১২–১৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অপরিশোধিত তেল আমদানি করার কথা ছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন রিলায়েন্স প্রায় ৫ লাখ ব্যারেল তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করত।
তেল গুজরাটের বন্দরে খালাসের পর জামনগরে নিয়ে যাওয়া হতো, যেখানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শোধনাগার রিলায়েন্সের মালিকানায় পরিচালিত হয়। এই শোধনাগারের দৈনিক পরিশোধন ক্ষমতা ১০ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল।
কমোডিটিজ বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপ্লার-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে রিলায়েন্স রোসনেফ্ট ও লুকোইল থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬ লাখ ২৯ হাজার ৫৯০ ব্যারেল রুশ তেল কিনেছে, যা ভারতের মোট দৈনিক অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। গত বছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৮ হাজার ব্যারেল।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান রাইস্টাড এনার্জি-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পঙ্কজ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘রিলায়েন্সের অপরিশোধিত তেলের ৫০ শতাংশেরও বেশি রাশিয়া থেকে আসে। রুশ তেল বন্ধ করলে কোম্পানির মুনাফা ও মার্জিনে স্বল্পমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
তবে তিনি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্য, ব্রাজিল বা গায়ানা থেকে বিকল্প সরবরাহ পাওয়া সম্ভব, যদিও রুশ তেলের মতো স্বল্পমূল্যের সুবিধা মিলবে না।
ভান্ডা ইনসাইটসের জ্বালানি বিশ্লেষক বন্দনা হরি বলেন, ‘ভারতীয় রিফাইনারদের রুশ তেল ক্রয় ছিল একপ্রকার সুযোগসন্ধানী পদক্ষেপ- মূলত তুলনামূলক কম দামের কারণে।’
হেলসিঙ্কি-ভিত্তিক সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (CREA) জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে ভারতের রাশিয়ার মোট অপরিশোধিত তেল রপ্তানির হয়েছে ৩৮ শতাংশ, চীনের পরেই দ্বিতীয় সর্বাধিক ক্রেতা হিসেবে।
বিশ্লেষকদের মতে, রিলায়েন্স ও অন্যান্য ভারতীয় রিফাইনাররা এখন বিকল্প উৎস যেমন মধ্যপ্রাচ্য, ব্রাজিল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়াতে পারে। যদিও এতে খরচ কিছুটা বাড়বে, তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০–৬২ ডলারের মধ্যে থাকায় বড় ধাক্কার আশঙ্কা নেই।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন